জমি দখল, জালিয়াতি ও প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। নতুন প্রণীত ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় এই আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফলে, হারানো জমি এখন প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত আসছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, এই আইনের আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যেই ১১ ধরনের জমির প্রকৃত মালিকরা জমি ফিরে পাবেন। অন্যদিকে, যারা অন্যায়ভাবে এসব জমি দখল করেছেন, তাদের তা ছাড়তেই হবে। চলুন জানি, কোন ১১ ধরনের জমি ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে:
-
হেবা দলিল: করফাঁকি বা সাব-কবলা এড়াতে হেবা করা হলেও, শর্ত পূরণ না হলে দলিল আংশিক বা সম্পূর্ণ বাতিল হবে। উত্তরাধিকারীর অংশের ক্ষতি করেও স্ত্রী বা অন্যের নামে হেবা করলে তা বাতিল হবে।
-
এওয়াজ বদল দলিল: মৃত ব্যক্তির জমি বণ্টন না করে অন্যের সঙ্গে এওয়াজ বদল করলে দলিল বাতিল হবে।
-
সরকারি খাস জমি: লিজ বা বন্দোবস্ত ছাড়া খাস জমি দখল করলে, দখল বাতিল হবে এবং প্রকৃত মালিক জমি ফিরবেন।
-
জবরদখলকৃত জমি: ক্ষমতার অপব্যবহার বা জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করা জমি আদালতের মাধ্যমে প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়া হবে।
-
জাল দলিলের জমি: জাল বা মিথ্যা দলিল তৈরি করে দখল করা জমি বাতিল হবে।
-
সাব-কবলা দলিল: একাধিক ওয়ারিশের জমি এক ওয়ারিশ অন্যদের না জানিয়ে বিক্রি করলে দলিল বাতিল হবে।
-
বণ্টননামা ছাড়া বিক্রি: শরিকদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বণ্টন ছাড়া বিক্রি করা জমি অবৈধ হবে।
-
যৌথ সম্পত্তি: যৌথভাবে কেনা জমিতে কোনো অংশীদার নিজের অংশ ছাড়িয়ে বিক্রি করলে, অতিরিক্ত অংশ প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়া হবে।
-
খতিয়ান বিভ্রান্তি: ভুলভাবে অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে জমি বিক্রি হলে দলিল বিলীন হবে।
-
ভুল দাগ বা চৌহুদ্দির জমি: ভুল দাগে বা অন্যের জমিতে বসবাস অবৈধ দখল হিসেবে গণ্য হবে।
-
বিনিময় সম্পত্তি: দেশত্যাগকারীদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করলে তা বাতিল হবে।
আইনজীবী বেলায়েত হোসেন জানান, “আগে জমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে ৬ থেকে ১০ বছর লাগত। এখন ১ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। দেওয়ানি কার্যবিধিতে সময় ও হাজিরার সীমাবদ্ধতা আনার ফলে মামলার গতি বেড়েছে। ভূমি রেকর্ড সংশোধন, জাল দলিল বাতিল ও দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত মামলা এখন ভূমি ট্রাইব্যুনালেই নিষ্পত্তি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ দ্রুত বিচার ও প্রতিকার পাচ্ছেন। নতুন আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে জমি দখল, জালিয়াতি ও প্রতারণার যুগ শেষ হওয়ার পথে। এটি ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

