বাংলাদেশে বহু পরিবারে দেখা যায়, বৈধ ওয়ারিশ হওয়া সত্ত্বেও পুত্র, কন্যা বা স্ত্রী প্রায়ই পিতার বা মাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। সুপ্রিম কোর্টের একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বলছেন, এর পেছনে মূলত চারটি গুরুতর কারণ কাজ করে। এই চারটি ধাপ না মেনে সম্পত্তি বিতরণ আইনত বৈধ হয় না। বিডিএস রেকর্ডে নাম থাকলেও পূর্ববর্তী মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায় না।
ঋণ পরিশোধ অপরিহার্য: মৃত্যুর আগে যদি ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত থাকেন, তার সম্পত্তি থেকে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। ঋণ শোধের আগে সম্পত্তি বণ্টন করা হলে তা আইনগতভাবে অবৈধ। চিকিৎসা, ব্যবসা বা ব্যক্তিগত কারণে থাকা ঋণ পরিশোধ না হলে বাকি ওয়ারিশরা বৈধভাবে সম্পত্তি পেতে পারবেন না।
ওসিয়ত পূরণ: ঋণ পরিশোধের পর মৃত ব্যক্তির কোনও ওসিয়ত থাকলে তা পূরণ করতে হবে। আধুনিক আইন অনুযায়ী, ওসিয়তের বৈধতা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ওসিয়তনামা দলিল থাকা আবশ্যক। ওসিয়ত জীবিত অবস্থায় কার্যকর হয় না, এটি মৃত্যুর পরই কার্যকর হয়।
দাফন ও কাফনের খরচের ব্যবস্থা: ওসিয়ত পূরণের পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে মৃত ব্যক্তির দাফন ও কাফনের খরচের পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে। এই ধাপ না হলে পরবর্তী বণ্টন আইনত বৈধ হবে না।
বৈধ ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন: উপরের তিনটি ধাপ সম্পন্ন হলে অবশিষ্ট সম্পত্তি বৈধ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে এর মধ্যেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- ধর্মান্তরিত ওয়ারিশ: ধর্মান্তরিত হলে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।
- হত্যা বা দমন: স্বজন হত্যা করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পত্তি থেকে বাদ পড়েন।
- পূর্ববর্তী আইন অনুযায়ী সীমাবদ্ধতা: ১৫ জুন ১৯৬১-এর আগে মৃত্যুবরণকারীদের ক্ষেত্রে সন্তান থাকলেও সম্পত্তি পাওয়া কঠিন। ১৫ জুলাই ১৯৬১-এর পর আইন পরিবর্তিত হয়েছে।
- হেবা/উপহার দলিল: পিতা জীবিত অবস্থায় যদি সম্পত্তি হেবা বা দলিলের মাধ্যমে দেন, তা বৈধ। পরে কেউ তা বাতিল করতে পারবে না, যদি না দলিল প্রতারণার মাধ্যমে তৈরি হয়।
আইনজীবী সতর্ক করে বলেন, এই চারটি ধাপ না মেনে অনেক বৈধ ওয়ারিশ তাদের পিতার বা মাতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন। মুসলিম পরিবারে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে আইন, ফরায়েজ এবং কুরআনের বিধি সবসময় বিবেচনা করতে হবে। অন্যথায় যেকোনও বিতর্ক বা মামলা খারাপ ফলাফলের দিকে যেতে পারে।

