ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বগুড়ার বড়গোলা শাখা আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের নামে খেলাপি ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ জারি করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তার অংশীদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জুলাই গণহত্যার ৯ মামলার পলাতক আসামি এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বগুড়া শাখার প্রধান মো. তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশ মান্নার কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে ব্যাংক আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
ব্যাংকের নোটিশে বলা হয়েছে, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ পাঠিয়েও তিনি কোনো উদ্যোগ নেননি। নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
ব্যাংকের ভাষ্য, ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না হলে তারা আদালতের আশ্রয় নেবে।
অভিযোগ ওঠেছে, প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অংশের বিনিয়োগ মান্না ও আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান চৌধুরী মিলে আত্মসাৎ করেছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাজাহান চৌধুরী ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান।
স্থানীয়দের দাবি, তার মাধ্যমেই যুক্তরাষ্ট্রে টাকা পাচার করা হয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ১৬ (ঠ) ধারা অনুযায়ী, ঋণখেলাপি হলে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। সে হিসেবে ঋণ পরিশোধ না হলে মান্নার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা উঠেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও মান্না একই দলের একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত। ওই নেতা বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার মামলার আসামি। বিষয়টি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে—এটি সত্য। তবে তিনি এখনো ব্যাংকের চিঠি পাননি।
আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি দুই বছর জেল খেটেছি, ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে ছিলাম। তাহলে আমি দোসর না হলে কি শাহআলম দোসর? আমার এমডি আওয়ামী লীগ করে—এটা ঠিক। কারণ কোম্পানিটি হয়েছে ১৫–১৬ বছর আগে। তখন আমিও আওয়ামী লীগ করতাম। গত ১০ বছরে আমি ওই কোম্পানির কাছে যেতে পারিনি। কারণ সব নিয়ন্ত্রণ করত ওই ছেলে। টাকাপয়সা সব আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। এটাও ঠিক যে সে আমেরিকা পালিয়েছে।”
মান্নার অভিযোগ, “এই নিউজগুলো এখন করানো হচ্ছে ঠিক ভোটের আগে। এত দিন না!” তবে চিঠি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তিনি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

