জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আটটি যুক্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের জন্য আপিল করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম এই আপিল দায়ের করেন।
প্রসিকিউশনের আটটি যুক্তি:
১. আইনের বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ অনুযায়ী প্রথমেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। অপরাধের ভয়াবহতা (গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স) বিবেচনা করলে সব চার্জেই মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য।
২. গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধগুলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতম অপরাধ। আইন অনুযায়ী এর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
৩. নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণ: নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমণের ব্যাপকতা মারাত্মক ছিল। এর জন্য মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য শাস্তি আইনত সঠিক নয়।
৪. অপরাধের ভয়াবহতা অনুযায়ী শাস্তি: গ্রাভিটি অব দ্য অফেন্স অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র ন্যায্য শাস্তি।
৫. সমাজের প্রত্যাশা: আসামির অধিকার দেখার পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও সমাজের যৌক্তিক প্রত্যাশাও বিচারককে বিবেচনা করতে হবে। সমাজ আশা করে এই ধরনের অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
৬. পলাতক থাকা ও বিচার বাধা দেওয়া: আসামিরা জানতেন ট্রাইব্যুনালে মামলা চলছে। তবুও তারা পলাতক থেকে বিভিন্ন ট্রায়ালে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে শাস্তি কমানো যায় না।
৭. হত্যাযজ্ঞের বিস্তার: আসামিদের নির্দেশে দেশে ১৪০০-এর বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, ২৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। হত্যাযজ্ঞ পৈশাচিক এবং পরিকল্পিত ছিল।
৮. চার্জ-১ এ ন্যায্য বিচার: চার্জ-১ এ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে আসামিদের প্রত্যক্ষ জড়িততা রয়েছে। এই কারণে চার্জ-১ এর জন্যও মৃত্যুদণ্ড ন্যায্য।
আপিল দায়েরের পর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘‘গত ১৭ নভেম্বর পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম রায় ঘোষণা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’জনই সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড, আরেকটিতে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আমরা সেই আমৃত্যু কারাদণ্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডে রূপান্তরের জন্য আপিল করেছি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আমরা এর আগেই আপিল দায়ের করেছি। আপিল নিষ্পত্তি ৬০ দিনের মধ্যে হওয়ার বিধান রয়েছে। আশা করছি, সময়ের মধ্যে এটি নিষ্পত্তি হবে।’’ তামিম বলেন, ‘‘এই অপরাধের নৃশংসতার তুলনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড কম বা অপরিপক্ক হয়েছে। তাই হেনিয়াস অফেন্সের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র প্রযোজ্য শাস্তি। তাদের নির্দেশ ও উসকানিতে ১৪০০-এর বেশি মানুষ শহীদ ও ২৫ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।’’

