উপদেষ্টা পরিষদ আজ (বৃহস্পতিবার) গুম প্রতিরোধ ও হাওর সংরক্ষণ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এছাড়া সুইজারল্যান্ডের বার্নে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১. গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫:
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তি যদি অন্তত ৫ বছর ধরে নিখোঁজ থাকে এবং জীবিত ফিরে না আসে, তবে ট্রাইব্যুনাল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডিসাপিয়ার্ড’ বা ‘গুম’ ঘোষণা করতে পারবে। সরকার ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’-এর জন্য মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দিতে পারবে। ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারী নিজ উদ্যোগে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়া গুম হওয়া ব্যক্তির স্ত্রী বা নির্ভরশীল পরিবার তার সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে, কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়া।
২. বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫:
নতুন অধ্যাদেশে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও অধিক্ষেত্র স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। হাওর ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের জন্য সুরক্ষা বিধান রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ও সেখানে নিষিদ্ধ কার্যক্রমের তালিকা এবং অপরাধের শাস্তি সম্পর্কেও বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় ও সংরক্ষণ কার্যক্রমে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতাও প্রদান করা হয়েছে।
৩. বার্নে নতুন দূতাবাস:
উপদেষ্টা পরিষদ সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্নে বাংলাদেশের নতুন দূতাবাস স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের পার্মানেন্ট মিশন রয়েছে জেনেভায়। বার্নে দূতাবাস না থাকার কারণে জাতিসংঘ ও দূতাবাস সংক্রান্ত কাজ জেনেভা থেকে পরিচালিত হতো।
বার্নে দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কারণ সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী ও কৌশলগত অংশীদার। প্রাথমিকভাবে একজন রাষ্ট্রদূত, ফার্স্ট সেক্রেটারি ও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ দিয়ে দূতাবাস কার্যক্রম শুরু হবে। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন অফিস রয়েছে।
বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতাদের মধ্যে শরিফ ওসমান হাদির স্বাস্থ্য বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান নিয়মিতভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন এবং সরাসরি হাদির চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। উপদেষ্টা পরিষদ মহান বিজয় দিবস সুন্দর ও সুচারুভাবে উদযাপনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

