রাজশাহীর চারঘাটে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই আদেশ জারি করা হয়। একই দিনে স্থানীয় থানাগুলোতে ডেকে প্রশিক্ষণরত এসআইদের হাতে এই চিঠি হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ একাডেমির দেওয়া চিঠি থেকে জানা যায়, গত ১ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড মাঠে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারি ব্যাচ–২০২৩-এর সমাপনী কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলছিল। প্যারেড বিরতির সময় পূর্বনির্ধারিত মেনু অনুযায়ী সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয় প্রশিক্ষণার্থীদের। তবে অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই সময় কিছু প্রশিক্ষণার্থী পরিবেশিত নাশতা প্রত্যাখ্যান করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। তারা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে অসম্মান করে উগ্র আচরণ শুরু করেন এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ ত্যাগ করে ব্যারাকে চলে যান।
এই ঘটনায় পুলিশ পরিদর্শক মহসিন আলী কর্তৃক দাখিলকৃত একটি লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই প্রশিক্ষণার্থীদের আচরণ শুধু শৃঙ্খলার লঙ্ঘনই নয়, তা অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থীদেরও শৃঙ্খলাভঙ্গের পথে উৎসাহিত করে। এই ঘটনার পর একাডেমির পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়ত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে প্রশিক্ষণার্থীদের দেওয়া কৈফিয়ত সন্তোষজনক না হওয়ায় চূড়ান্তভাবে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এদিকে, অব্যাহতি পাওয়া উপপরিদর্শকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন জানান, সমাপনী কুচকাওয়াজের আগে ১৯–২৩ অক্টোবর তাদের একাংশকে ছুটিতে পাঠানো হয়। ছুটি শেষে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় একাডেমিতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ছুটি চলাকালীনই ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থীর বরখাস্তের আদেশ স্থানীয় থানাগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০ অক্টোবর পুলিশ একাডেমিতে ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপারের সমাপনী কুচকাওয়াজের আয়োজন স্থগিত করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাজশাহী সফরে এলেও, কুচকাওয়াজ অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয় বলে জানানো হয়।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভুঞা এ বিষয়ে বলেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২৫২ জন উপপরিদর্শককে পর্যায়ক্রমে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং চিঠি ইস্যু হচ্ছে।”
এই ব্যাপক শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থীকে একসঙ্গে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। শৃঙ্খলারক্ষার প্রশ্নে পুলিশ একাডেমির এমন কঠোর পদক্ষেপ পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল ও সুশৃঙ্খল কর্মী তৈরির অঙ্গীকারকেই প্রমাণ করে।