গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। যেখানে পুলিশি উপস্থিতিতে টাকার বান্ডিল লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৭ অক্টোবরের ঘটনায় দুই ব্যবসায়ীর মধ্যে টাকা আদান-প্রদান করার দৃশ্য একটি ভিডিওতে ধরা পড়েছে, যা এখন পুলিশের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানার ভেতরে হলুদ গেঞ্জি ও সাদা প্যান্ট পরা একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি টাকার বান্ডিল গুনে দিচ্ছেন। তার পাশেই আরও কয়েকজন মেঝেতে শুয়ে আছেন। এই টাকা পুলিশি নজরদারিতে শপিং ব্যাগে রেখে দুই ব্যক্তি, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও আরিফুর রহমান খান টাকা গ্রহণ করছেন। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়।
এ ঘটনা ঘটে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার হাজতখানায় ২৭ অক্টোবর রাতে। ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে টুটুল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। টুটুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে থানায় আটক করা হয়েছিল। পরে, এই ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে যে, পুলিশ অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেছে।
এই ঘটনার মূল চরিত্ররা হলেন- টুটুল, তার ব্যবসায়িক অংশীদার মহিউদ্দিন এবং মহিউদ্দিনের সহযোগী আরিফ। টুটুল যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক এবং তার ও মহিউদ্দিনের যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা রয়েছে। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এই টাকা আদান-প্রদান হয়েছে বলে জানা গেছে।
২৭ অক্টোবর টুটুলকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করে টঙ্গী পূর্ব থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় টুটুলের পরিবারকে ৭৪ লাখ টাকা দাবি করা হয়। দাবি না মেটালে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯ লাখ টাকা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় পৌঁছান এবং পুলিশের সহায়তায় টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে টুটুলের ফুফাতো ভাই, আইনজীবী জিএম ইব্রাহিম হোসেন অভিযোগ করেন, পুলিশ অবৈধভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। অপরদিকে, মহিউদ্দিন ১৬ লাখ টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে পুলিশের উপস্থিতিতে টাকা আদায়ের অভিযোগ তিনি খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি টুটুলের লোকদের কাছ থেকে জানুন।”
এ বিষয়ে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, “ঘটনার সময় আমি থানায় ছিলাম না। টাকা আদান-প্রদান নিয়ে আমি কিছু জানি না। সম্ভবত আসামির আত্মীয়রা খাবার বহন করার সময় টাকা নিয়ে এসেছিলেন।” তিনি আরও জানান, ঘটনার পর সেন্ট্রির দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল মুক্তাদিরকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামানকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গাজীপুর পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন এবং টুটুলের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, তারা সম্পূর্ণ নির্দোষ।
এ ঘটনার পর গাজীপুর পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম এবং পুলিশি তৎপরতার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা ভবিষ্যতে আরও গভীর তদন্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে।