রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় গিয়ে ছিনতাইকারীদের দেখিয়ে দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো ভুক্তভোগীকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলেছে কর্তব্যরত কর্মকর্তা।
ছিনতাইয়ের শিকার আহমদ ওয়াদুদ পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি বর্তমানে দৈনিক বণিক বার্তা–র সহসম্পাদক হিসেবে কর্মরত। সামাজিক মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন তিনি। পোস্টের শিরোনাম ছিল— “মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের সাথে এক ঘণ্টা”।
ওয়াদুদের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে তাঁর ওপর হামলা হয়। ছিনতাইকারীরা তাঁর মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এ সময় তারা চাপাতি দিয়ে আঘাতও করে। ভাগ্যক্রমে আহত হলেও আঘাত গুরুতর ছিল না। ঘটনাকালে তাঁর স্ত্রী একটু দূরে থাকায় নিরাপদে ছিলেন।
ঘটনার মাত্র পাঁচ মিনিট পরই ওয়াদুদ ও তাঁর স্ত্রী মোহাম্মদপুর থানায় পৌঁছান। ডিউটি অফিসার এসআই জসিমের কক্ষে গিয়ে ঘটনাটি জানান। তবে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার বদলে তাদের অপেক্ষায় রাখা হয়।
থানায় এসেই প্রথম অপমানের মুখোমুখি হন ওয়াদুদ। এক সাদাপোশাক পরা পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর জামার বোতাম লাগানো নিয়ে তিরস্কার করেন। চাপাতির আঘাতে বোতাম খুলে গিয়েছিল, সেটা বলার পরও তিনি শান্ত থাকেন এবং নির্দেশ মেনে নেন।
অভিযোগ নেওয়ার বিষয়ে শুরু হয় নতুন নাটক। বলা হয়, অভিযোগ লেখার কেউ নেই। ওয়াদুদ নিজেই লিখে দিতে চাইলেও কলম দেওয়া হয়নি। শেষে স্ত্রী ব্যাগ থেকে কলম বের করে দিলে তিনি নিজেই লিখে জমা দেন অভিযোগ। ডিউটি অফিসার অভিযোগের কোনো কপি না দিয়ে কেবল একটি ফোন নম্বর ধরিয়ে দেন— এএসআই আনারুলের। জানানো হয়, তিনি নবোদয় হাউজিং এলাকায় ব্যস্ত আছেন।
ওয়াদুদ যখন অনুরোধ করেন, এখনই ঘটনাস্থলে গেলে ছিনতাইকারীদের ধরা যেতে পারে, তখন এসআই জসিম বিরক্ত হয়ে বলেন, “আপনার কমন সেন্স নাই? ছিনতাইকারী আপনার-আমার জন্য বসে থাকবে নাকি?”
হতাশ ওয়াদুদ এরপর ওসি ইফতেখার হাসানের কক্ষে যান। সেখানে আরও অপমানজনক বক্তব্য শুনতে হয়। ওসি বলেন, “আমি ওসি হয়েও কমদামি ফোন ব্যবহার করি। আপনি এত দামী ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!”
শেষ পর্যন্ত ওসির নির্দেশে তিনি এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করতে যান। আনারুল ও তাঁর দল ঘটনাস্থলে নিয়ে যান ওয়াদুদকে। ঘটনার প্রায় ৪০ মিনিট পর সেখানে পৌঁছানো হয়। আশ্চর্যজনকভাবে ছিনতাইকারীরা তখনো ঘটনাস্থলে ছিল।
ওয়াদুদ দূর থেকে ছিনতাইকারীদের দেখিয়ে দিলেও আনারুল প্রথমে সাড়া দেননি। পরে আবারও দেখানোর পরও তিনি এগিয়ে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই ফাঁকে ছিনতাইকারীরা ধীরে ধীরে স্থান ত্যাগ করে।
এরপর আনারুল বলেন, “এখন ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে অভিযান চালাবো। আপনারা বাসায় চলে যান।”

