মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হযরত শাহ মাদার (রহ.) দরগাহ শরীফ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি এবং দরগাহর বংশধর আল আমিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা শরীফ মুজিবুল হক (রহ.) মৃত্যুর আগে ইসলামী ব্যাংক মাদারীপুর শাখায় এতিমখানার নামে ৪৭ লাখ টাকা রেখে যান। অভিযোগ রয়েছে, আল আমিন কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে ওই অর্থ পুরোপুরি তুলে নেন।
এছাড়া ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রসংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত টাকা তুলেছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র জানায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধিত এতিমখানাটির (নিবন্ধন নম্বর: মাদা-২৫) নামে প্রতি বছর প্রায় ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। তা মাথাপিছু দুই হাজার টাকা ধরে ১৪৫ জন এতিম নিবাসীর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এতিমখানায় গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন এতিম ছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৫০ জন। তা সত্ত্বেও আল আমিন প্রতিবারই ১৪৫ জনের নামে পুরো বরাদ্দ তুলে নেন।
শুধু তাই নয়, এতিমখানার কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সদস্যদের না জানিয়ে এবং স্বাক্ষর জাল করে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কমিটির অনুমোদনও নিয়ে নেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এতিমখানার বিভিন্ন অনুদান ও মানতের টাকার কোনো হিসাবও কমিটিকে দেননি। উল্টো এসব অর্থ ব্যবহার করেছেন নিজের ড্রেজিং ব্যবসা, মোটরসাইকেল শো-রুম এবং রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়।
এছাড়া তিনি মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক হলেও নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে সরকারি বেতন তুলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতিমখানার ভেতরে অটোরিকশার গ্যারেজ নির্মাণ করে নিজের নামে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মাদ্রাসার দোকানঘরের ভাড়ার টাকাও ব্যক্তিগতভাবে তুলে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৭ জুলাই হযরত শাহ মাদার (রহ.) দরগাহ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অভিযান চালায় দুদক। অভিযানে তারা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।”
তবে দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, “এতিমদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাই। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

