গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাড়িতে মাত্র দুটি ফ্যান, দুটি বাল্ব এবং একটি ছোট ফ্রিজ চালানোর পরও এক মাসের বিদ্যুৎ বিল এসেছে প্রায় ১১ লাখ টাকা। বিদ্যুতের এমন ‘ভুতুড়ে বিল’ পেয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. আব্দুল মান্নান।
উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গাড়ারণ গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের বাড়িতে স্ত্রী মর্জিনা বেগমের নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সংযোগ রয়েছে। রোববার দুপুরে ওই বাড়িতে জুলাই মাসের বিদ্যুৎ বিল পৌঁছে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। বিলের অঙ্ক দেখে তিনি এবং পরিবারের সদস্যরা পুরোপুরি বিস্মিত হয়ে পড়েন।
বিলের কাগজে দেখা যায়, জুলাই মাসে তাদের বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৪ টাকা। অথচ গত তিন মাসের বিল ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। এপ্রিল মাসে ছিল ১৪০ টাকা, মে মাসে ১১৫ টাকা এবং জুন মাসে মাত্র ১২৬ টাকা।
এমন বিল হাতে পেয়ে হতাশ ও আতঙ্কিত আব্দুল মান্নান বলেন, “আমি গরিব মানুষ, ঝালমুড়ি বিক্রি করেই সংসার চলে। এরকম একটা বিল দেখে তো মাথাই ঘুরে গেল। এখন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ঘোরাঘুরি করতে হবে। এ যেন এক নতুন ভোগান্তি।”
তিনি আরো বলেন, “আমার স্ত্রীর নামে এই সংযোগ। সে প্রবাসে থাকে। ঘরে এমন কিছুই নেই, যেটা দিয়ে এত পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব। সারাজীবনে এত টাকার বিদ্যুৎ খরচ করা যায় না। আমি দাবি জানাই, দ্রুত এই বিল সংশোধন করে হয়রানি বন্ধ করা হোক।”
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ারুল আলম বলেন, “একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতার বাড়ির একটি মিটারে এত বিশাল অঙ্কের বিল আসা যে ভুলবশত হয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি নির্ভুলভাবে ঠিক করে দেওয়া হবে।”
তিনি আরো আশ্বস্ত করে বলেন, “এ ঘটনায় যে কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ভুল রয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিদ্যুৎ সেবায় এমন অনিয়ম ও ভুল বিল প্রক্রিয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু একটি স্বল্প আয়ের পরিবারের ওপর এমন হয়রানি গভীর উদ্বেগের বিষয়। জনসাধারণের অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভাগের ভুলে প্রায়শই এমন অস্বাভাবিক বিল আসে, যার জন্য সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন অফিসে ঘুরতে হয় এবং ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বশীলতা ও বিল প্রস্তুতের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, শুধু ভুল স্বীকার করলেই চলবে না বরং এমন হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

