কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পিরোজপুরের কাউখালীতে প্রথম শ্রেণির নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রটি বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে কার্যত অচল অবস্থায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে ভবনটি এখন যেন পরিণত হয়েছে একটি আবাসিক হোটেলে। নেই কার্যক্রম, নেই জনবল, এমনকি অফিস কক্ষেই গড়ে তোলা হয়েছে বসবাসের পরিবেশ।
২০০৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু করে। মূল ভবনের নির্মাণ শেষ হয় ২০১২ সালে এবং সেটি হস্তান্তর করা হয় ২০১৬ সালে। তবে সরঞ্জাম সংক্রান্ত ব্যয়ের হিসাব আজও অজানা। ২০১৮ সালে কিছু সীমিত জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের উপস্থিতি অনিয়মিত বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। নির্মাণের পাঁচ বছর পর আনসার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হলেও ছয় বছরেও কার্যকর কোনো জনবল আসেনি। নিয়মিত দেখা মেলে না সেই একমাত্র আনসার সদস্যকেও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে তালা ঝুলছে। পাশের পকেট গেট দিয়ে প্রবেশ করে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি সরকারি অফিস। অফিস কক্ষে টেবিল-চেয়ার নেই, আছে বিছানা। আসবাবপত্র ফেলে রাখা বাইরে। দড়ি টানিয়ে শুকানো হচ্ছে কাপড়, রান্না চলছে কক্ষেই। অফিস যেন রীতিমতো আবাসিক হোটেলে রূপ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বসানো যন্ত্রপাতিগুলো আজও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কার্যক্রমের কোনো চিহ্ন নেই, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখা মেলে কালেভদ্রে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.বেলাল আহমেদ বলেন, “সাত-আট বছর ধরে এখানে থাকি, কখনো দেখি নাই গেট খুলতে। মাঝে মধ্যে দুইজন আনসারকে দেখা যায়, কিন্তু কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী চোখে পড়ে না।” আমিনুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন এই পথে যাতায়াত করি। কোনোদিন এই অফিসে কার্যক্রম দেখিনি। অথচ এটা জেলার একমাত্র আবহাওয়া অফিস।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, “পিরোজপুর নদীবেষ্টিত উপকূলীয় জেলা। আবহাওয়া অফিস থাকলেও কখনো এর কোনো সুফল পাইনি। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অফিসে কোনো কার্যক্রম হয় না। আমরা চাই অবিলম্বে এর কার্যক্রম শুরু হোক।”
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে কাউখালী একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত। এখান থেকে দুটি নদী দুটি পথে চলে গেছে—একটি বরিশাল হয়ে ঢাকা এবং অন্যটি স্বরূপকাঠী হয়ে সন্ধ্যা নদী পথে। ফলে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবে বাস্তবে সেই গুরুত্বের কোনো প্রতিফলন নেই। কোটি টাকা খরচ করেও আবহাওয়া অফিসটি আজ শুধু একটি তালাবদ্ধ ভবন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌ আবহাওয়া পূর্বাভাস কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজেদুল হক বলেন, “পূর্বের বিষয় জানি না। তবে আমি ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর থেকে দায়িত্বে আছি। নিয়মিত অফিস করছি এবং যন্ত্রপাতির ডেটা সংগ্রহ চলছে।” তিনি আরও বলেন, “কিছু যন্ত্রপাতি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ আছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” অফিস কক্ষে বিছানা পেতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা ২৪ ঘণ্টার অফিস, তাই রাতের বিশ্রামের জন্য বিছানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়।”
সরকারি অর্থ ব্যয়ে গড়ে তোলা এই কেন্দ্রটি অব্যবহৃত থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বলছেন, কোটি টাকা ব্যয় হলেও জনগণের কোনো উপকারে আসছে না এটি। তাদের দাবি, দ্রুত জনবল নিয়োগ দিয়ে কেন্দ্রটি সচল করা হোক এবং নৌরুটে যাতায়াতকারী মানুষদের সঠিক আবহাওয়ার তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক।

