বাংলাদেশের অনলাইন টিকিট বুকিং সেক্টরে এক সময়ের সবচেয়ে বড় নাম ছিল ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। তবে হঠাৎ করেই যেন গায়েব হয়ে গেছে পুরো প্রতিষ্ঠানটি। অফিস বন্ধ, ওয়েবসাইট উধাও, আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রশিদের মোবাইলও বন্ধ—সব মিলিয়ে এখন এটি যেন একটি প্রলয়ংকরী প্রতারণার গল্প।
শনিবার (৩ আগস্ট) থেকে প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত গ্রাহক, ট্রাভেল এজেন্সি মালিক ও বিনিয়োগকারীরা একে একে মতিঝিলের অফিসে এসে দেখতে পান, তালা ঝুলছে অফিসের দরজায়। কেউ অফিসে নেই। এমনকি ওয়েবসাইটেও আর ঢোকা যাচ্ছে না।
বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, শত শত কোটি টাকার লেনদেন রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে। অসংখ্য এজেন্সি তাদের ক্লায়েন্টদের টিকিট বুক করতে ফ্লাইট এক্সপার্টে আগাম অর্থ জমা রেখেছিল। এখন সেই অর্থ কোথায়, কিভাবে ফেরত আসবে—তা নিয়ে কেউ কিছু জানে না।
মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটির এমডি সালমান আত্মগোপনে চলে গেছেন, এমন গুঞ্জন রয়েছে। এমনকি তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলেও বিভিন্ন দিক থেকে তথ্য আসছে। তবে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, গত শনিবার হঠাৎ করেই এমডি সালমান বিন রশিদ পরিবারসহ দেশ ছেড়ে চলে যান। কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।
সালমানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
২০১৭ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করেছিল ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। অনলাইনে স্বল্পমূল্যে এয়ার টিকিট বুকিং, হোটেল রিজারভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রসেসিং—সব কিছু এক প্ল্যাটফর্মে এনে এটি খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে তরুণ প্রবাসী ও পর্যটকদের কাছে এটি ছিল একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড।
কিন্তু আজ, সেই নির্ভরতার জায়গাটি পরিণত হয়েছে এক বিশাল প্রতারণার আতঙ্কে। গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীরা এখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন—তাদের কষ্টার্জিত অর্থের কোনো হদিস কি আদৌ পাওয়া যাবে?

