চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার এখন চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। সাত বছর আগে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভারটির নিয়মিত কোনো পরিদর্শন বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। এর স্টিল গার্ডার থেকে খুলে নেওয়া হচ্ছে নাট-বোল্ট, চুরি যাচ্ছে নিরাপত্তা বেষ্টনী, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো লাখো গাছ।
২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চার লেনের এই ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চে। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর যানবাহন চলাচলের জন্য এর মূল অংশ খুলে দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে চালু করা হয় জিইসি ও ষোলশহর এলাকার লুপ ও র্যাম্প।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর ফ্লাইওভারটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক)। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইনে বলা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটি বারও নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়নি।
সিডিএর এক সমীক্ষা বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার গাড়ি চলাচল করে এই ফ্লাইওভার দিয়ে। অথচ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি ও চুরিচামার কারণে ঝুঁকি বেড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত লুপ ও র্যাম্পের অন্তত ২৯টি স্টিল গার্ডারের নাট-বোল্ট খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
শুধু তাই নয়, নগরের শপিং কমপ্লেক্স থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী চুরি গেছে। একই অবস্থা মুরাদপুর ও নাসিরাবাদ এলাকাতেও। ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো ৯০ হাজার গাছ মরে গেছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে শত শত বাতির খুঁটি। ফ্লাইওভারের ওপর থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতিগুলোও। কোথাও ময়লার স্তূপ, কোথাও জমে থাকা বৃষ্টির পানি। নিরাপত্তাহীন এসব জায়গায় ঘোরাফেরা করে মাদকসেবী ও ভাসমান কিশোর-তরুণেরা।
স্থানীয় এক ফুটপাত দোকানি জানান, ভাসমান ও মাদকসেবী কিশোর-যুবকেরাই ফ্লাইওভারের নাট-বোল্ট খুলে নিচ্ছে। বাধা দিলে তারা দল বেঁধে হুমকি দেয়। কয়েক দিন আগে এমন ঘটনায় লোকজন জড়ো হয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।
ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক বিভাজকে তৈরি করা হয় সবুজায়ন ও হাঁটার পথ। লাগানো হয় ৯০ হাজার গাছের চারা, বসানো হয় টাইলস, ঝরনা, সাবমারসিবল পাম্প ও শত শত বিদ্যুতের খুঁটি। এসব কাজে ব্যয় হয় ১৫ কোটি টাকা। এখন এসবের অধিকাংশই অচল বা উধাও।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘গার্ডারের নাট-বোল্ট খুলে নেওয়া হলে ঝুঁকি তৈরি হবেই। আমরা চসিককে রক্ষণাবেক্ষণের গাইডলাইন দিয়েছি। জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় এগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’’
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘নাট-বোল্ট ও গ্রিল চুরির অভিযোগ রয়েছে। মাদকসেবীরা এ কাজে জড়িত থাকতে পারে। পুলিশকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।’’

