ঢাকার ইস্কাটনে জনকণ্ঠ ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে একদল কর্মী, যারা সম্প্রতি জনকণ্ঠে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
গত শনিবার রাতে জনকণ্ঠ ভবনের সামনে এক সমাবেশে মীর জসিম নামে একজন ব্যক্তি নিজেকে ‘নতুন সম্পাদকীয় বোর্ড’-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, “বর্তমান সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি কেবল প্রকাশকের দায়িত্বে থাকবেন। তার দুই ছেলেও জনকণ্ঠে অবাঞ্ছিত।”
এর আগে একই দিন মালিকপক্ষ কিছু কর্মীকে বরখাস্ত করে। এরপর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ওই কর্মীরা হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সম্পাদক ও প্রকাশক শামীমা এ খান এ ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেন। তার অভিযোগ, একটি গোষ্ঠী জনকণ্ঠ ভবনে ‘মব’ সৃষ্টি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা চালায়।
তিনি এ বিষয়ে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক ও পত্রিকার পরিকল্পনা পরামর্শক জয়নাল আবেদীন শিশির এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী কয়েকজন সাংবাদিককে দায়ী করেন। তবে আফিজুর রহমান ও জয়নাল আবেদীন শিশির দুজনেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, “দখলের অভিযোগ আসলে আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ভাষ্য। এখনো আমরা মালিকানা বা প্রকাশনায় নেই। আমরা কেবল একটি বোর্ড গঠন করেছি, যা কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মতিতেই হয়েছে।”
গতকাল রোববার সকাল থেকে জনকণ্ঠ অনলাইন সংস্করণে ‘প্রিন্টার্স লাইনে’ আর আগের মতো সম্পাদক ও প্রকাশকের নাম দেখা যাচ্ছে না। সেখানে এখন লেখা হচ্ছে: ‘সম্পাদকমণ্ডলী কর্তৃক গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের সদস্য প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে গ্লোব প্রিন্টার্স লি. ও জনকণ্ঠ লি. থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।’
জনকণ্ঠ পত্রিকাটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। শুরুতে এটি মুক্তিযুদ্ধপন্থী অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়, বিশেষ করে ‘সেই রাজাকার’ সিরিজ পাঠকদের দৃষ্টি কাড়ে। তবে পরবর্তীতে এটি আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনকণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ পাল্টে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়, এরপর পত্রিকাটি জামায়াত ও এনসিপি-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর প্রভাবাধীন হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকার বহু সংবাদমাধ্যমেই মালিকানা ও কর্মীস্তরে বড় রকমের রদবদল হয়েছে। কোথাও কোথাও চাপে, আবার কোথাও ‘মব’ তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

