চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ফসলি জমি ও পতিত ভূমির পাশে একে একে চারটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ আশপাশে নেই কোনো জনবসতি, রাস্তা বা স্থাপনা। ধানখেত ঘেঁষা এসব কালভার্টে এখন ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা।
নির্মাণের সাত বছর পার হলেও কালভার্টগুলোর আশপাশে কোনো সরকারি স্থাপনা তো দূরের কথা, জমি অধিগ্রহণও হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, এটি ছিল একজন সংসদ সদস্যের ‘ইচ্ছাপূরণের প্রকল্প’।
এই চারটি কালভার্ট নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। কাজটি হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রত্যেকটি কালভার্ট নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কালভার্টগুলোর নামকরণও করা হয়েছে সম্ভাব্য সরকারি দপ্তরের নামে—দক্ষিণ রাউজান ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সড়ক বক্স কালভার্ট, রাউজান-রাঙ্গুনিয়া পুলিশ সার্কেল কার্যালয় সড়ক বক্স কালভার্ট, দক্ষিণ রাউজান হাইওয়ে থানা সড়ক বক্স কালভার্ট ও দক্ষিণ রাউজান খাদ্যগুদাম সড়ক বক্স কালভার্ট।
চৌমুহনী বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে এই চারটি কালভার্ট তৈরি করা হয়। বাজারের সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) কার্যালয়ের বিপরীতে মাত্র ২৫০ মিটার ভেতরে, ধানখেত ঘেঁষে এগুলো নির্মাণ করা হয় ২০১৭ সালের দিকে। এখন চারপাশে শুধু ধানখেত, নেই কোনো খাল বা খাত। কালভার্টগুলো সারি করে বসানো হয়েছে; একটির পর একটি ২৫০ ফুট দূরত্বে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট, প্রস্থ ১৫ ফুট। আর আশপাশে নেই কোনো সড়ক বা অবকাঠামো।
গতকাল রোববার (৩ আগস্ট ২০২৫) সরেজমিনে দেখা যায়, কালভার্টের ওপর জমে আছে বাজারের আবর্জনার স্তূপ। আশপাশে কোনো রাস্তা নেই। যেখানে কালভার্টগুলো বসানো হয়েছে, সেখান থেকে মাত্র ২০ ফুট দূরেই ধানক্ষেতের বিস্তীর্ণ মাঠ।
প্রকল্প নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, সেখানে ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে থানা, পুলিশ সার্কেল কার্যালয় এবং খাদ্যগুদাম গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এসবের একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমিও অধিগ্রহণ হয়নি। রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “সাধারণত যেখানে রাস্তা নেই সেখানে সেতু বা কালভার্টের প্রকল্প নেওয়া হয় না। তবে ওই সময়ের সংসদ সদস্যের নির্দেশেই এগুলো হয়েছে। হয়তো সেটা সঠিক হয়নি।”
কালভার্ট নির্মাণের সময় সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংছিং মারমা জানান, এসব প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই। রাউজান-রাঙ্গুনিয়া পুলিশ সার্কেলের এএসপি নুরুল আমিনও জানান, এখনো পুলিশ সার্কেল কার্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাউজানের অনেক জায়গায় এখনো খালের ওপর সেতু না থাকায় মানুষ সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে। জলদাশপাড়ার জালিয়ে খালে বহু বছর ধরে সেতু না থাকায় গ্রামবাসী ভোগান্তিতে আছেন। দেওয়ানপুর-পাঁচখাইন সড়কের সেতুটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে সেখানে যান চলাচলও প্রায় বন্ধ।
স্থানীয় শিক্ষক ও জমির আবদুল কাদের বলেন, “আমার বাবার চাষাবাদের জমির পাশ দিয়ে কালভার্ট বানানো হয়েছে। আমাদের কিছু না জানিয়ে জমি দখলের চেষ্টা হয়েছে।” ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আয়ুব খান বলেন, “এক জায়গায় চারটি কালভার্টের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা ছিল এক ব্যক্তির ইচ্ছাপূরণের ফল।”

