আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ঘুষ দিলেই নিয়মের বাইরে কাজ করে দেওয়া হয়—এমন অভিযোগ পুরনো। তবে এবার সিসিটিভি ফুটেজসহ একাধিক ঘটনার বিশদ বিবরণে উঠে এসেছে পুলিশের এক চক্রের ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র, যেখানে সরাসরি জড়িত অফিসার ইনচার্জ (ওসি), এসআই ও কনস্টেবল।
ভারতের আগরতলার বাসিন্দা অনিতা বণিক বাংলাদেশে আসেন ১৪ এপ্রিল ২০২৫। ভিসায় ৬০ দিনের বেশি অবস্থানের অনুমতি না থাকলেও তিনি ছিলেন ৫০ দিনের বেশি। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে, মাত্র ৯৫ হাজার টাকায় তাঁকে ফেরত পাঠানো হয় ভারত সীমান্তে। সূত্র জানায়, নমিতা ২ আগস্ট দেশে ফেরেন এসআই আব্দুর রহিমের আইডি ব্যবহার করে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ রকম ঘটনা শুধু একটি নয়। বন্দরের যাত্রী ও সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়া যাত্রীদের কাছ থেকেও ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। দিতে না চাইলে করা হচ্ছে নানা হয়রানি। ২২ জুলাই কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দুই বাসিন্দা ফারুক ও জলিল চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলেন। তখন ডিউটিতে থাকা এসআই আব্দুর রহিম তাঁদের বলেন, ‘তোমরা দিল্লি অ্যাম্বাসি ফেস করতে যাচ্ছ, আমি সব বুঝি। চোখ ফাঁকি দিতে পারবা না।’
তিনি তাঁদের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। রাজি না হওয়ায় তিনি ভারতীয় ইমিগ্রেশনে ফোন করে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে দেন। আগরতলায় পৌঁছার পর তাঁদের জানানো হয়, আগেই তথ্য পাঠানো হয়েছে—তাই প্রবেশ দেওয়া হবে না। ফিরে এলে আব্দুর রহিম গালিগালাজ করেন এবং ৫ হাজার টাকা দিলে তবেই তাঁদের ছাড় দেওয়া হয়।
২৩ জুলাই সকালে চারজন মেডিকেল ভিসাধারী যাত্রী ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে সীমান্ত পার হন। কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন তাঁদের পাসপোর্ট নিয়ে ব্যারাক রুমে গিয়ে তা এসআই আব্দুর রহিমের হাতে তুলে দেন। কাউন্টারে লাইন ছাড়াই তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, যাত্রীছাউনিতে বসে টাকাও দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস হাউসের নিষিদ্ধঘোষিত এক যাত্রীকে মোটা অঙ্কের টাকায় সীমান্ত পার করানো হয় আখাউড়া ইমিগ্রেশন দিয়ে। অভিযোগ আছে, দেলোয়ার হোসেন এসআই হাবিবের আইডি ব্যবহার করে ওই পাসপোর্টে সিল দেন। পরে ওই যাত্রী বেনাপোলে ধরা পড়লে ঘটনা স্পেশাল ব্রাঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়।
নিয়ম অনুযায়ী, কনস্টেবলের কাজ সীমিত যাত্রী সহায়তায়। কিন্তু কনস্টেবল দেলোয়ার হোসেন নিয়ম ভেঙে তিন বছর ধরে ইমিগ্রেশন ডেস্কে বসে কাজ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি চোরাচালানি ও লাগেজ পার্টিদের সঙ্গে যোগসাজশে সুবিধা নিচ্ছেন। একই উপজেলার (মুরাদনগর) বাসিন্দা হওয়ায় ওসি আব্দুস সাত্তার ও দেলোয়ারের প্রভাব বেশি। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত এসআই আব্দুর রহিমও।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আখাউড়া ইমিগ্রেশনের ওসি মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে সব কিছু নিয়ম অনুযায়ী চলছে। যাত্রীরা কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।’
তবে এসব অভিযোগ সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘ঘুষ লেনদেন বা হয়রানির অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে তদন্তে প্রমাণ মিললে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

