ভোলার চরফ্যাশনে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নেওয়া ১৮৮টি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত কাজ না করে বরাদ্দকৃত টাকা ও গম উত্তোলন করে আত্মসাৎ হয়েছে। কিছু কিছু প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে নুরাবাদ ইউনিয়নের লোকজন মানববন্ধন করেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে চরফ্যাশনে টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় মোট ১৮৮টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ও ২৫৫ টনের বেশি গম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সরকারি নির্দেশ ছিল, চলতি বছরের ১৫ মার্চের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে হবে।
স্থানীয় পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, এওয়াজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাদ্রাজ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা সংস্কারের জন্য কাবিটা বরাদ্দ ছিল ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান সোহেল জানান, রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের সমস্যায় পড়েছে।
হাজারীগঞ্জের মোজাফফরিয়া নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা সংস্কারের জন্য টিআর থেকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সরেজমিনে কোনো কাজ দেখা যায়নি। মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মোতাহার বলেন, ‘আমরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। সেই টাকায় ইট কিনে রেখেছি। বর্ষার পর কাজ শুরু করব।’
নুরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব চর তফাজ্জল এ ছালাম দাখিল মাদ্রাসার মাঠ ভরাটে টিআর প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। সহকারী মৌলভি ফরিদউদ্দিন জানান, ‘আমরা পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার টাকা, কিন্তু কাজ হয়নি।’ কাজের দায়িত্বে থাকা নুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কাজ থেমে ছিল, বর্তমানে পাঁচ দিন ধরে মাঠে বালু ফেলা হচ্ছে।’
হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কাবিটার আওতায় বরাদ্দ ছিল ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা, কিন্তু মাত্র ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মো. সফিউল্লাহ জানান, ‘দেওয়া টাকায় কিছু দেয়াল নির্মাণ করার চেষ্টা করেছি, এতে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্প করতে গিয়ে আমাদের অনেক ব্যয় হয়।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রকৃত কাজ না করেও কাগজে-কলমে শতভাগ কাজ দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ ও গম উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া বিল ও ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। তবে এসব অভিযোগ পিআইও মো. অলিউল্লাহ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘যেসব প্রকল্পে কাজ হয়নি বা অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে। আবহাওয়ার অবনতির কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে আবহাওয়া ঠিক হলে কাজ আবার শুরু হবে। কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে বিল দেওয়া হবে না।’

