২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের ৪৭.৪৮ কিলোমিটার অংশ ছয় লেনে উন্নীতকরণের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। একই সঙ্গে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬২৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। তারপরও কাজের অগ্রগতি শূন্যের কাছাকাছি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে মাত্র ৩.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণও কোনো অংশে হয়নি।
সর্বশেষ ৮ আগস্ট ভূমির দাম নির্ধারণের নোটিশ দেয়া হয়। জমির মালিকরা বলছেন, বর্তমান বাজারদর প্রতি শতক ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হলেও তাদের কাছে মাত্র ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জমিতে থাকা স্থাপনার মূল্যায়নও সঠিক হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কিছু জমির মালিক ও ভবনের দাম যথাযথ শ্রেণিতে ঠিক করা হয়েছে, যারা সাভেয়ার রিয়াজুল ইসলাম থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘এই ধরনের কথা বলাটা ভিত্তিহীন। ভূমি অধিগ্রহণে শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সার্ভে করার সময় ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন।’ সড়কটি ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে যশোরের চাঁচড়া পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। বড় বড় খানাখন্দে ভরা। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) দুই বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষুদ্র সংস্কারকাজ করেছে। কিন্তু সড়ক চলাচলের জন্য এখনও উপযুক্ত হয়নি।
প্রকল্পটি তিন ভাগে বিভক্ত। লট-১ ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল থেকে কালীগঞ্জ মাহতাব উদ্দিন সরকারি কলেজ গেট পর্যন্ত ১৫.৯ কিলোমিটার, লট-২ কলেজ গেট থেকে যশোর মান্দারতলা পর্যন্ত ১৫.৮ কিলোমিটার এবং লট-৩ মান্দারতলা থেকে চাঁচড়া পর্যন্ত ১৫.৮ কিলোমিটার। নির্মিত সড়কে থাকবে একটি ফ্লাইওভার, চারটি সেতু, ৫৫ কালভার্ট, পাঁচটি ভেহিকুলার ওভারপাস, আটটি পেডেস্ট্রিয়ান ওভারপাস ও একটি রেলওয়ে ওভারপাস।
স্মার্ট হাইওয়ে হিসেবে রূপান্তরের জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ও অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হবে। পৌর এলাকায় সড়ক হবে চার লেন এবং বাইরে ছয় লেন। ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৩৭৩.১৩ একর। লট-১ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানার জমি ৯১.৮৬ একর, সরকারি সংস্থার জমি ১.৫২ একর। লট-২ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানা জমি ১৩২.২২ একর, লট-৩ অঞ্চলে ব্যক্তিমালিকানা জমি ৭১.৫৭ একর এবং সেনানিবাসের ৮.০৮ একর জমি রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় জেলা পরিষদের জমি ১৪৫.৪৬ একর। মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটখাট জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
জমির মালিকদের অভিযোগও রয়েছে। কালীগঞ্জের আড়পাড়ার আব্দুল জলিল বলেন, ১১.১৫ শতক জমির মধ্যে ৩.১৫ শতক অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সেখানে একটি দ্বিতল ভবন আছে, যেখানে প্রিন্টিং প্রেস ও ডিজিটাল ফটো ল্যাব পরিচালিত হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের জমি ও ভবন সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। নিম্নমানের ভবন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আপত্তি করার পরও গ্রহণ করা হয়নি। এজন্য ২৬ মে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত জেলা প্রশাসককে আপত্তি নেয়ার নির্দেশ দেয়, কিন্তু তারা অনিচ্ছুক।
উইকেয়ার প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার নিলন আলী বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় কাজ বন্ধ আছে। লট-১-এ ৭.২৫ শতাংশ কাজ হয়েছে, অন্য দুই লটে ২ শতাংশের নিচে। বিদ্যুতের পোল সরানো হয়নি, তাই সড়ক বিভাগের জমিতেও কাজ শুরু হয়নি। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলে দ্রুত কাজ করা হবে।’

