২০২১ সালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শর্তটি সরিয়ে দেয়। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হন। কারণ দেশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ইসরায়েলের স্বীকৃতি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা ছিল— “এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ, তবে ইসরায়েল ব্যতীত”। সেই নীতিই হঠাৎ বদলে গেল, কোনো সরকারি ব্যাখ্যা ছাড়াই।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ইসরায়েলি নজরদারি প্রযুক্তি কেনার বহু মিলিয়ন ডলারের গোপন বাণিজ্যিক চুক্তিই সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের এক তদন্তে উঠে এসেছে- ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার মোট ১৯০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি ও স্পাইওয়্যার প্রযুক্তি কিনেছে। এসব সরঞ্জাম মূলত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধী রাজনৈতিক কার্যক্রম দমন করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলি উৎসের প্রযুক্তির মূল্য প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ডলার— যা যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শুধু ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রযুক্তি কিনেছে, যা দেশের মোট ডিজিটাল নজরদারি বিনিয়োগের ৫৮ শতাংশ। অন্যদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)–ও নিজেদের জন্য আধুনিক স্পাই টেক সংগ্রহ করেছে।
এনটিএমসি মূলত ইন্টারনেট ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ, ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন (DPI) ও ডিক্রিপশন সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করেছে। পুলিশ ও র্যাব ব্যবহার করেছে মোবাইল ও ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর এবং সিগন্যাল জ্যামিং ডিভাইস, যা সাধারণত বিক্ষোভ মনিটর ও বিঘ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ডিজিএফআই মনোযোগ দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, কল আড়িপাতা এবং সিগন্যাল জ্যামিংয়ে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত ১৬০ ধরনের নজরদারি প্রযুক্তি ও স্পাইওয়্যার বাংলাদেশে আমদানি বা স্থাপন করা হয়েছে। এর অনেকগুলো কেনা হয়েছে গোপন টেন্ডার ও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে। ব্যবহৃত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে IMSI ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর এবং সেলেব্রাইট, ফিনফিশার ও প্রেডেটরের মতো স্পাইওয়্যার, যা প্রায়ই বিচারিক অনুমতি ছাড়াই নাগরিকদের ওপর ব্যাপক নজরদারি চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে।

