শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রি করেছে। ব্যাংকের ঢাকা প্রধান কার্যালয় ও উত্তরা শাখাসহ কয়েকটি শাখায় এই কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ব্যাংকের এক ডিএমডি এবং এক এভিপি-কে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার সংকট তীব্র হলে ব্যাংকটি সুযোগ নিয়ে ডলার কারসাজিতে জড়ায়। অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রির দায়ে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটিকে জরিমানাও করেছিল। নথিপত্রে বলা হয়েছে, ডলার কারসাজির নেপথ্যে ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন ও ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন ম্যানেজার (ডিএমডি) মোস্তফা হোসেন। তারা গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকের হিসাবের বাইরে নিজস্ব লেনদেনে ব্যবহার করতেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের নিজস্ব নিরীক্ষায় এই অনিয়ম ধরা পড়ে। অডিট টিম ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের এভিপি ও ইমপোর্ট ইনচার্জ মোহাম্মদ নকিবুল হকের ড্রয়ার থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্যাশ চেক ও পে-অর্ডার উদ্ধার করে। এছাড়া ২৮ লাখ টাকার আত্মসাতের প্রমাণও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে ডিএমডি মোস্তফা হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এভিপি নকিবুল হককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৮ মে পর্যন্ত ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে অতিরিক্ত এক্সচেঞ্জ গেইন বাবদ আদায় করা হয়েছে ৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাজী ইন্টারন্যাশনাল, গাজী ট্যাংক, গ্লোবাল ব্র্যান্ড প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ক্যাশের মাধ্যমে ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ইনগ্লোন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড থেকে ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, “ডলার এক্সচেঞ্জ গেইন ব্যাংকের আন্তর্জাতিক নিয়মের অংশ। ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ডলার লেনদেন করে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।” তবে ব্যাংকারদের মতে, শুধু শাহজালাল নয়, অন্তত ২০টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত ডলার রেটের বেশি দামে লেনদেন করেছে। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট জানার পরে কমপক্ষে ১ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করেছে। এর পেছনে আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্যও প্রভাব ফেলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “ডলার লেনদেনে পার্থক্য স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক দরে লেনদেন হলে ব্যাংককে জানাতে হবে। শাহজালাল ব্যাংকের নিয়মের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। ২০২২ সালের সংকটের সময় অন্তত ১০টি ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছিল।”

