বাংলাদেশের সরকারি ঠিকাদারিতে গত সাড়ে ১৫ বছর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল তিন প্রভাবশালী চক্র—মির্জা আজম, তমা গ্রুপের আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক এবং ম্যাক্স গ্রুপের গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রাথমিক তদন্তে বলছে, এ ত্রিচক্র অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, যার বড় অংশই পাচার হয়েছে বিদেশে।
দুদকের তথ্যমতে, তমার কর্ণধার আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক এখন পলাতক। তিনি দুবাইতে দুটি ফ্ল্যাট, একটি পেট্রোল পাম্প এবং একটি শপিং মলে একাধিক দোকানের মালিক। মালয়েশিয়ার “সেকেন্ড হোম স্কিম”-এ তিনি ও তার পরিবার সদস্যপদ নিয়েছেন, সেখানেও তার বিনিয়োগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে “তমা কনস্ট্রাকশনস” নামে কোম্পানি খুলে বিপুল অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্ণধার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তদন্তকারী সংস্থা।
মির্জা আজম বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তার দেশ-বিদেশের সম্পদ মিলিয়ে মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ধানমন্ডি, বারিধারা, নিকুঞ্জ ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিলাসবহুল বাড়ি, রিসোর্ট, মার্কেট ও কৃষিজমি রয়েছে। বিদেশে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তার বিপুল সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আবু সালেহ গেন্দার নামে দুটি পেট্রোল পাম্প ও চারটি বাড়ি রয়েছে, যা আজমের অর্থে কেনা বলে ধারণা করছে দুদক।
দুদকের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে তমা ও ম্যাক্স বাংলাদেশে সরকারি প্রকল্পে কাজ করে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। কিন্তু দেশে তাদের সম্পদ ৫০০ কোটি টাকার বেশি নয়। বাকিটা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা।
মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তমা ও ম্যাক্সের জন্য সরকারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা কমিশন নিতেন। যদিও তমা কনস্ট্রাকশনে তার কোনো শেয়ার নেই। নিজের নামে অপি হাউজিং কোম্পানি গড়ে তোলেন এবং বিদেশে অর্থ বিনিয়োগ করেন।
দুদক ও সিআইডির যৌথ টিম বলছে, বিদেশে থাকা এই সম্পদের পরিমাণ প্রাথমিক তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। শিগগিরই বিভিন্ন দেশ থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে, যা এই ত্রিচক্রের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ উন্মোচন করবে।

