প্রতিবেশী দেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত সাইবার হামলা চলছে। বিশেষ করে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতে এই আক্রমণের হার বেড়ে যায়। হ্যাকার গ্রুপগুলো আগেই ঘোষণা দেয় তারা কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ সেবায় আক্রমণ চালাবে।
তবে এই সাইবার হামলা প্রতিরোধে সরকারের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সেবার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সমন্বিত কৌশল এবং প্রোটেকশন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নীতি ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি ছাড়া এই হুমকি অব্যাহত থাকবে।
অপ্রতুল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দূর্বল প্রযুক্তি সাইবার হামলার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের ওয়েবসাইটগুলো এমনভাবে বানানো যা খুবই দুর্বল। এছাড়া কমদামে দুর্বল ডেভেলপার বা প্রোগ্রামার দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা, একই টেমপ্লেট দিয়ে বিভিন্ন সাইট বানানো এবং নিম্নমানের হোস্টিং সেবাতে হোস্ট করা সাইবার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েবসাইট বানিয়ে দায় শেষ মনে করে। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে তাদের তেমন মাথাব্যাথাও থাকে না। সাইবার নিরাপত্তায় কোনো বিনিয়োগ করতেও তারা রাজি নয়। একটি ওয়েবসাইট তৈরির পর সেটার দুর্বলতা মূল্যায়ন করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়, যা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই করে না।
সরকারি ও শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে ভর্তির নিবন্ধন, আবেদন, ভর্তির প্রক্রিয়া, ফলাফল সব থাকে। হ্যাকাররা এসব ওয়েবসাইটের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ডেটাবেসে প্রবেশ করে সব তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো জানেই না তাদের সব তথ্য-উপাত্ত অন্যের হাতে চলে গেছে। অনেক সময় জানার পরও চুপ থাকে।
সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারকে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে হবে। নিয়মিত ওয়েবসাইট ও সার্ভারের দুর্বলতা মূল্যায়ন করতে হবে। ভালোমানের ডেভেলপার দিয়ে ওয়েবসাইট বানাতে হবে। সাইট তৈরিতে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। দক্ষ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তৈরিতে জোর দেওয়া দরকার।
যেসব আইপি থেকে প্রতিনিয়ত সাইবার আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো চিহ্নত করে কালো তালিকাভূক্ত করতে হবে এবং সমন্বয় করে সেসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও জরুরি। কারণ, প্রযুক্তি একটি পরিবর্তনশীল খাত যা নিয়মিত তদারকি, পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। লঙ্ঘিত হবে নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষাও।
লেখক: সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, ডিকোডস ল্যাব লিমিটেড।
সূত্র: সমকাল

