সাত মাসে স্বামীর হাতে দেশে ১১৩ নারী নিহত হয়েছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পারিবারিক সহিংসতা এবং হত্যার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ১৩ আগস্ট মধ্যরাতে সৈয়দা ফাহমিদা তাহসিন (কেয়া) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ, দীর্ঘকাল সংসারে চলা কলহের পর স্বামী সিফাত আলী ফাহমিদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তিনি ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন। ফাহমিদার পরিবার মিরপুর মডেল থানায় সিফাতসহ ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসে দেশে ৩৬৩টি পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মোট ৩২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০৮ জন নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন। স্বামী ও স্বামী পরিবারের সদস্য বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হাতে নিহত নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৩৩, ৪২ ও ৩৩। এ ছাড়া ১১৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় নারী সুরক্ষা হেল্পলাইন ‘১০৯’-এর তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার নারীরা সহায়তার জন্য ৪৮ হাজার ৭৪৫টি কল করেছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এর তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৪১টি কল এসেছে, যার মধ্যে পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ ৯ হাজার ৭৪৬টি এবং শুধুমাত্র স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ৯ হাজার ৩৯৪টি।
ফাহমিদার পরিবার জানায়, তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বিয়ের পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ফাহমিদার ফুফা মো. শামসুদ্দোহা খান প্রথম আলোকে বলেন, সিফাত প্রায়ই ফাহমিদাকে মারধর করতেন। শেষ পর্যন্ত সেই সহিংসতা মৃত্যুতে পৌঁছেছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফাহমিদা রান্না করছিলেন। সিফাত এসে তাঁর সঙ্গে বাক্যবিনিময় করেন এবং মারধর শুরু করেন। পরে ফাহমিদাকে ঘরের কক্ষে আটকে দেন। রাত দুইটার দিকে সিফাত পরিবারের কাছে ফোন করেন এবং দাবি করেন, ফাহমিদা অসুস্থ। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গেলে দেখতে পান, তিনি মারা গেছেন। পরে সিফাত লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান।
ফাহমিদার ফুফা বলেন, “চুলায় রান্নার আয়োজন চলছিল, চার সন্তানও বাসায় ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়।”
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ রোমন জানান, মামলাটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। প্রধান আসামিক সিফাতকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জে ১৮ জুনও স্বামীর হাতে স্ত্রী নিহত হয়ে লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নিহত সাবিনা বেগমের স্বামী আনু মিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে এপ্রিল মাসে ইয়াছিন আলী নামের এক ব্যক্তি স্ত্রী, সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল আই খান মনে করেন, পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও আইন প্রয়োগে দুর্বলতার কারণে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ছে। তিনি বলেন, “নারীদের অবশ্যই নির্যাতনমূলক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি জরুরি। শাস্তির ভয় থাকলে নির্যাতন কমে।”

