সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় কয়েকশ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাথমিকভাবে সত্যতা পেয়েছে। সংস্থার এনফোর্সমেন্ট টিম ইতোমধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেছে এবং যারা এই কাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, “যতটুকু আমরা জানি, সাদা পাথর লুটপাটের তথ্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কমিশন পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
দুদকের অনুসন্ধান থেকে দেখা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তবর্তী পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’-এ অনুমতি ছাড়া পাথর উত্তোলন চলে আসছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এই এলাকার পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও, গত বছর আগস্ট থেকে বিশেষ করে সাম্প্রতিক তিন মাসে শত শত কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষিত এই এলাকা এখন বহু গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে।
১৩ আগস্ট দুদকের পাঁচ সদস্যের দল সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ক্যাম্প ও পরিবহণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাই করে। প্রতিবেদনে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) অবহেলা তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী অবৈধ খনিজ উত্তোলন রোধ করা বিএমডির দায়িত্ব হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীর গত জুলাইয়ে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দেওয়া মন্তব্য পাথর লুটপাটকে উৎসাহিত করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদও যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চারজন ইউএনওকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে দায়ী করা হয়েছে।
পুলিশও এই ঘটনায় অংশ নিয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান নির্দেশ থাকার পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনানসহ পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর উত্তোলনের জন্য কমিশন গ্রহণ করেছেন। প্রতি ট্রাক পাথরের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে আলাদা চাঁদা দেওয়া হতো। নৌকা ব্যবহার করেও একই নিয়ম ছিল।
বিজিবির দায়িত্বও প্রশ্নবিদ্ধ। তিনটি বিজিবি পোস্ট থাকলেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেনসহ সদস্যরা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে অবৈধ পাথর উত্তোলনে বাধা দেননি।
দুদকের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক নেতাদের নামও উল্লেখ আছে। এতে সিলেটের বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও এনসিপির অন্তত ৪২ নেতাকর্মীর নাম উঠে এসেছে। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ ব্যক্তিদের নামও রয়েছ। এই তালিকায় রয়েছে কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক নেতা ও যুবনেতারা।
দুদক জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যারা এই লুটপাটে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত অনুসন্ধান এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাদা পাথর এলাকা থেকে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।

