ফরিদপুরে চাঁদা না দেওয়ায় মহানগর কৃষক দলের নেতা ফরিদ শেখের বিরুদ্ধে তাদের ইটভাটার রাস্তা ভেকু দিয়ে কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে জেলা সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুরে পরশমণি ব্রিকস-এ (পিএমবি) এই ঘটনা ঘটেছে। ভাটার মালিক সদ্য প্রয়াত বিশ্বজিৎ ঘোষের পরিবার অভিযোগ করেছে, টাকা দিলে তাদের ৯ বছরের সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্বজিৎ ঘোষের মৃত্যুর পর ভাটার দায়িত্ব নিয়েছেন তার মেজো ভাই চঞ্চল ঘোষ। পরিবারটি রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত নয়, তবুও তাদের নাজেহাল করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষের আত্মীয় হিসেবে।
পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর ফরিদ শেখ ও বিএনপির কয়েকজন মিলিতভাবে বিশ্বজিৎ ঘোষসহ চার ভাইকে ঢাকায় একটি মিথ্যা হত্যা মামলায় নাম দেন। এরপর প্রভাব খাটিয়ে বিশ্বজিৎ ঘোষকে আটক করা হয়। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে ফিরতে পারেননি।
সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ভাটার চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে ভাটাটি ভেঙে দেওয়ার।
ভুক্তভোগী পরিবার বলেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে ফরিদপুর পোরসভার বৈঠাখালী এলাকার বাসিন্দা ও মহানগর কৃষক দলের সহসভাপতি ফরিদ শেখ ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছেন। টাকা না দেওয়ায় আগেও রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়ির সামনে মহড়া ও হুমকি-ধমকি চালানো হয়েছে।
চঞ্চল ঘোষের বোন ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছন্দা ঘোষ বলেন, “ফরিদ শেখ ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছে। টাকা না দেওয়ায় ভাটার দুই ম্যানেজারকে মারধর করা হয়েছে এবং ইট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন দিয়ে চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে ফরিদ শেখের নেতৃত্বে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতা রাস্তা কেটে বড় গর্ত করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও তার ১০ মিনিট আগেই তারা চলে গেছে। আমাদের পরিবার কোনো টাকা দেবে না, তবুও হুমকি ও চাপ প্রতিনিয়ত চলছেই। তারা ৯ বছরের সন্তান অপহরণের হুমকি দিয়েছে। ভয়ে আমরা শিশুটিকে অন্যত্র পাঠিয়েছি। বাড়ি জনশূন্য হয়ে পড়েছে।”
ফরিদ শেখ দাবি করেছেন, “এখানে চাঁদাবাজির বিষয় নেই। আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। প্রশাসন, ভাটা মালিক সমিতি ও এলাকার গণ্যমান্য সবাই বিষয়টি জানেন। ২০২২ সাল থেকে মাটি দেওয়ার ৯ লাখ টাকা আমি নিয়েছি। টাকা না দেওয়ায় পাওনাদাররা রাস্তা কেটে দিয়েছে।”
কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, “আমার বিষয়টি জানা নেই। ৯৯৯ ফোনে পুলিশ গিয়েছিল। চাঁদাসহ যে কোনো অভিযোগ থাকলে ভুক্তভোগীদের থানায় আসতে হবে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
এর আগে ফরিদ শেখ ও অন্যান্যরা ইটভাটার প্রবেশপথ অবরোধ করেছিল। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তা মুক্ত করা হয়।

