অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত এক বছরে প্রশাসনে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে পদ দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বিগত সরকারের সময় পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা মাত্র এক মাসে তিন ধাপে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু ডিসি নিয়োগে ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের প্রত্যাহার ও নতুন নিয়োগে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে।
নিয়োগ সংক্রান্ত ঘটনাগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা হাতাহাতি ও ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি জনপ্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে এক ঘণ্টা ওয়াশরুমে আটকে রাখা হয়।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফিরেনি। অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতি যেন স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত এই চিত্র দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনিয়মের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকরা নির্বিকার ছিলেন। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে জনমুখী প্রশাসন গঠনে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রশাসনকে প্রমিত কাঠামোয় আনার পরিবর্তে উল্টো লন্ডভন্ড করা হয়েছে।
গত এক বছরে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইেছে। জেলা প্রশাসক নিয়োগে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে।
অভিযোগ ওঠে জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধেও। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশিত হয়নি।
প্রায় ১৬ বছর পর সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী নেওয়া হলেও তা যাচাই-বাছাই হয়নি। পদোন্নতি ও পদায়ন বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি প্রশাসনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করছে। প্রশাসন ও অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন।
ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হলেও কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি বিলম্ব ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আসেনি। প্রশাসন, পুলিশ ও বিচারালয়ে সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সব জায়গায় ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
গত ডিসেম্বর মাসে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী নেওয়া হলেও যাচাই হয়নি। আওয়ামী সরকারের সময় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সীমাহীন লুটপাট করেছেন। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাস্তব চিহ্নিত করা হয়নি।
সাবেক সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, প্রশাসনে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেড়েছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, লোভ ও দুর্বল নেতৃত্ব এই পরিস্থিতির কারণ। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করা হয়েছে, আর বহিরাগতরা প্রশাসনে খবরদারি করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের ‘টপ টু বটম’ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ঘুষ, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি অতীতের তুলনায় বেড়েছে। চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেছে। বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে।

