আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ এবং দেউলিয়া মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের নতুন উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বিডিবিএল, বেসিক ব্যাংকসহ সাধারণ বীমা করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও বিএসইসির শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
বৈঠক থেকে উঠে এসেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে আদালত ঋণখেলাপিদের সম্পত্তি দখলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়, কিন্তু সেখানে বসে আছেন অবৈধ দখলদার। আদালত সমন জারি করলেও পুলিশ অনেক সময় আসামিদের ধরছে না। আরও একটি চিত্র হলো, এক রায়ের বিপরীতে একাধিক রিট মামলা দাখিল করা হচ্ছে। এমনকি এক উদাহরণে দেখা গেছে, এক মামলার রায়ের বিরুদ্ধে মোট ৪৪টি রিট করা হয়েছে।
সভায় আলোচিত হলো যে, ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থার ১০০টি মামলার বিপরীতে মোট ৩৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা জড়িত। এই মামলায় রয়েছে খেলাপি ঋণ, জরিমানা এবং কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকের পাওনা দাবিও। সর্বাধিক টাকা জড়িত রয়েছে জনতা ব্যাংকের ১০ মামলায় ১৫ হাজার ১৫১ কোটি টাকার ঋণ, এরপরে সোনালী ব্যাংক ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৩ হাজার ৯৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৩ হাজার ৭৪৮ কোটি, বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৪০০ কোটি এবং কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। অন্যান্য সংস্থার মামলায় সামান্য পরিমাণ টাকা জড়িত রয়েছে।
বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তির জন্য ফোকাল পয়েন্ট ঠিক করতে এবং নিয়মিত নজরদারি রাখতে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংস্থার প্রধানরা মাসে অন্তত একবার বৈঠক করে আপডেট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাবেন। এছাড়া, জেলা প্রশাসক, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সহযোগিতা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নাজমা মোবারেক বৈঠকের পর বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো মনোযোগ বাড়ালে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। শুনানির দিনে শুধু প্যানেল আইনজীবী থাকলেই চলবে না, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন।”
বৈঠকে এমন পরিস্থিতি উঠে এসেছে, যেখানে আদালত রায় দিলে দেউলিয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তা স্থগিত করতে রিট মামলা করেন। এক মামলার রায়ের বিপরীতে একাধিক রিট হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সঠিক ঠিকানায় গ্রাহকদের নোটিশ পাঠানো হচ্ছে, যাতে কেউ দাবি করতে না পারেন যে তারা নোটিশ পাননি।
এই উদ্যোগে আশা করা হচ্ছে, সরকারি তাগিদ ও নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে দেউলিয়া ও খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি পাবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমিত করা সম্ভব হবে।

