ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ব্যাংক অব বরোদা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড (আরকম) এবং এর সাবেক পরিচালক অনিল আম্বানির ঋণগুলোকে ‘জালিয়াতি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই তথ্য পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া একটি নথি থেকে জানা গেছে।
এই শ্রেণীকরণ আরকমের করপোরেট ইনসলভেন্সি রেজুলেশন প্রক্রিয়া (সিআইআরপি)-এর আগে নেওয়া ঋণের সঙ্গে সম্পর্কিত। একসময়ের জনপ্রিয় এই টেলিকম সংস্থা এবং এর সাবেক পরিচালকের চলমান আর্থিক জটিলতায় এটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরকম জানিয়েছে, ঋণগুলো তাদের দেউলিয়া প্রক্রিয়া শুরুর আগে নেওয়া হয়েছিল। কোম্পানির দাবি, আইবিসি ২০১৬-এর অধীনে একটি সমাধান পরিকল্পনা বা অবসায়নের মাধ্যমে এই ঋণ নিষ্পত্তি করা উচিত। বর্তমানে আরকম একজন রেজুলেশন পেশাদার, আনিস নিরঞ্জন নানাবতীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উল্লেখ্য, অনিল আম্বানি আর কোম্পানির পরিচালক নন।
ব্যাংক অব বরোদা জানিয়েছে, তারা এই পদক্ষেপের বিষয়ে আরকমকে আইনি পরামর্শ দিচ্ছে। সিআইআরপি চলাকালীন কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা সালিশি প্যানেলে কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা কার্যক্রম শুরু বা চালানো যাবে না। এই সুরক্ষাব্যবস্থা কোনো রায়, ডিক্রি বা আদেশ বাস্তবায়ন থেকেও কোম্পানিকে রক্ষা করবে। একটি সমাধান পরিকল্পনা ইতিমধ্যে ঋণদাতাদের কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। এখন এটি ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি)-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ঘটনা ঘটেছে অনিল আম্বানির গ্রুপ সত্তাগুলোর সঙ্গে কথিত ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর চলমান তদন্তের মাঝেই। জানা গেছে, ইডি প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি নিয়ে রিলায়েন্স হাউজিং ফাইন্যান্স, আরকম এবং রিলায়েন্স কমার্শিয়াল ফাইন্যান্সের তথ্য ১২-১৩টি ব্যাংকের কাছ থেকে চেয়েছে।
ব্যাংক অব বরোদা জানিয়েছে, তারা আইন অনুযায়ী এই জালিয়াতি শ্রেণীকরণের প্রতিবেদন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে। আরবিআইয়ের বাণিজ্যিক ব্যাংক ও জাতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জালিয়াতি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ‘মাস্টার ডিরেকশনস’ মেনে চলা হবে।
এর আগে গত জুনে দেশের বৃহত্তম ঋণদাতা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) আরকমের ঋণ হিসাবকে ‘জালিয়াতি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ২৪ আগস্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংক অব ইন্ডিয়া আরকমের ঋণকে জালিয়াতি হিসেবে ঘোষণা করে, তহবিল আত্মসাৎ ও ঋণ শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে সাবেক পরিচালক অনিল আম্বানির নাম উল্লেখ করেছে।
এ পরিস্থিতি সামনে আসার পর, দেখা যাবে এটি আরকমের চলমান দেউলিয়া প্রক্রিয়ার ওপর কী প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, ভারতের ব্যাংকিং খাতে অনাদায়ি সম্পদ (এনপিএ) মোকাবিলায় এর প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

