নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামের একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় নারীরা। তাঁদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাঁদের অজ্ঞাতে মোটা অঙ্কের ঋণ তুলে নিয়েছে।
জনতা বেগম, রুবিয়া খানমসহ আরও কয়েকজন নারী অভিযোগ করেন, আগের ঋণ শোধ করার পরও তাঁদের নামে নতুন ঋণ দেখানো হয়েছে। অনেকের সঞ্চয়ের টাকা জমা নেওয়ার পর তা হিসাবেও তোলা হয়নি। এতে হতদরিদ্র পরিবারগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে চলা এই পরিবারগুলোর অভিযোগ, এমন প্রতারণা শুধু টাকা হারানোর শঙ্কাই তৈরি করেনি, বরং প্রতিষ্ঠানটির ওপর তাঁদের আস্থা ভেঙে দিয়েছে।
এ ঘটনার জন্য মাঠকর্মী দিতি খানমের ওপর অভিযোগের আঙুল উঠেছে। তবে শুধু তাঁকে দোষারোপ করাই যথেষ্ট নয়। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভেতর থেকে এমন বড় আকারের দুর্নীতি একা একজন কর্মীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। মাঠকর্মী যেখানে ঋণের প্রস্তাব দেন, সেখানে অনুমোদন এবং টাকা বিতরণের দায়িত্ব থাকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের। তাহলে এই পুরো প্রক্রিয়ায় শাখা ব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ও হিসাবরক্ষকের ভূমিকা কী ছিল? তাঁরা কি এই ধরনের জালিয়াতি সম্পর্কে জানতেন না? নাকি তাঁরাও এর অংশ ছিলেন? মাঠকর্মী দিতির দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই গ্রাহকদের অজান্তে এই ঋণ তুলেছেন, যা এই প্রশ্নের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়।
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা গরিব মানুষকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ দেয় কিন্তু যখন এমন ঘটনা ঘটে, তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই ঘটনায় আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হারুন অর রশীদের বক্তব্য খুবই হতাশাজনক। তিনি বলছেন, ‘গ্রাহকেরা অফিস থেকে টাকা নেওয়ার পর কাকে দিয়েছেন, সেটা প্রতিষ্ঠানের দেখার বিষয় নয়।’ এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য প্রমাণ করে, প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চাইছে। গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেনের মাধ্যম হলো মাঠকর্মী। যদি মাঠকর্মীই গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেন, তবে তার দায়ভার প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। কারণ, মাঠকর্মী প্রতিষ্ঠানেরই একজন প্রতিনিধি।
ক্ষুদ্রঋণ খাতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের উচিত, এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। শুধু প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তদন্ত যথেষ্ট নয়। একটি স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সুরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি ঋণের অনুমোদন এবং কিস্তির টাকা জমা হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং ডিজিটালাইজড হওয়া উচিত, যাতে গ্রাহক নিজের মোবাইলেই সব তথ্য দেখতে পারেন।
সূত্র: প্রথম আলো

