বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। অন্তত আটজন কর্মকর্তা জাল সার্টিফিকেট জমা দিয়ে শুধু চাকরিই পেছেন না, বরং পদোন্নতিও নিয়েছেন। এসব সার্টিফিকেটে রয়েছে এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সনদ। সবই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে তৈরি।
তদন্তে দেখা গেছে, এই কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়া কাজ করে যাচ্ছিলেন। কয়েকজন এখনো ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে, আল আমীন নামে একজন কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএসসি ও এমএসসি সার্টিফিকেট জমা দিয়ে ডেস্ক অফিসার ও সিনিয়র পজিশনে কাজ করছেন। তবে তদন্তে প্রকাশ, তিনি কখনোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না।
এছাড়া, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করে ভুয়া বিবিএ ও এমবিএ সার্টিফিকেট জমা দিয়ে আরও চারজন কর্মকর্তা চাকরি পান। রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে শাখা ব্যবস্থাপক পদে চাকরি নিয়েছেন সাব্বির হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে ৫১টি জাল সার্টিফিকেট শনাক্ত করেছেন। কেউই তাদের শিক্ষার্থী ছিলেন না। কর্তৃপক্ষ বলেন, এ ধরনের জালিয়াতি তাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।
প্রাইম ইউনিভার্সিটির একটি ভুয়া স্নাতক সনদ ব্যবহার করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন খালেদা বেগম। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এই জালিয়াতি দীর্ঘ সময় ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাল সনদধারীরা শুধু নিজে সুবিধা নিচ্ছেন না, প্রকৃত যোগ্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগও নিচ্ছেন। এতে দেশে মেধাবীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেছেন, অনলাইনে ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে কঠোর যাচাই না থাকায় জালিয়াতরা সহজে চাকরি পাচ্ছেন। তারা এই অপকর্ম বন্ধে জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন, “জাল সনদ ব্যবহার ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত করাই নয়, প্রয়োজনে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে হবে।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এতদিন ধরে এই জালিয়াতরা কার সহায়তায় বা প্রশ্রয়ে ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন? তদন্ত চলছে। এই ঘটনা ব্যাংক খাতে নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও নিয়োগব্যবস্থার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে।

