রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডে অনিয়মের অভিযোগে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করছে। আইসিবি দাবি করছে, এই অনিয়ম বিনিয়োগকারীদের জন্য ২২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
রেস বর্তমানে ছয়টি ফান্ড পরিচালনা করছে, যার সম্মিলিত আকার ১,২২০ কোটি টাকা। এই ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান আইসিবি। আইসিবি গত ২৪ আগস্ট রেসকে পাঠানো আইনি নোটিশে জানিয়েছে, চারটি প্রকল্পে ৩৪৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ ট্রাস্ট ডিড ভঙ্গ করেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, কোথাও বন্ড থেকে মূলধন ও রিটার্ন ফেরত পাওয়া যায়নি, আবার কোথাও শেয়ার বেশি দামে কিনে পরে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “ট্রাস্ট ডিড ও আইন অনুযায়ী ট্রাস্টির অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ফান্ডগুলোতে অনিয়ম পাওয়া গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থারও ফান্ডগুলো নিয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় আইসিবি ফান্ডগুলোর সম্পদ ব্যবস্থাপক রেসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
রেসের এক কর্মকর্তা জানান, তারা আইসিবি’র নোটিশের জবাব দেয়নি। বরং আইসিবিকে পাল্টা নোটিশ পাঠিয়েছে, জানতে চেয়েছে কোন আইন লঙ্ঘন হয়েছে। বিস্তারিত জানানো হয়নি। গত ২৭ আগস্ট আইসিবি বিএসইসি’কে চিঠি দিয়ে ক্ষতির হিসাব এবং ফান্ডগুলোর অবস্থা তুলে ধরেছে। চিঠিতে বিশেষ অডিটের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ট্রাস্ট ডিড ভঙ্গ এবং ২০০১ সালের মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা যায়।
বিএসইসি মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইসিবি প্রথমে শোকজ নোটিশ এবং পরে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। রেসের ফান্ড ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। কমিশন ট্রাস্টিকে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।” কালাম বলেন, ফান্ডের সম্ভাব্য ক্ষতি খতিয়ে দেখতে বিশেষ অডিটরের নিয়োগও বিবেচনায় আছে। রেস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের বিনিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি। তারা প্রশ্ন তুলেছে—অনেক বছর আগের বিনিয়োগ নিয়ে এখন কেন ট্রাস্টি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আইসিবি সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য ক্ষতি ফান্ড অনুযায়ী:
- ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড – ৩৪.৮৮ কোটি টাকা
- এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড – ১৩.২০ কোটি টাকা
- ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড – ৩৩.৯৭ কোটি টাকা
- ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড – ২০ কোটি টাকা
- ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড – ৯৮ কোটি টাকা
- আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড – ১৯.৩৪ কোটি টাকা
রেস মূলত চারটি বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে—রিজেন্ট স্পিনিং মিলস ও বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ড, পদ্মা ব্যাংক ও মাল্টি সিকিউরিটিজের প্রি-প্লেসমেন্ট শেয়ার। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই চার প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ ৩৩৩.৭১ কোটি টাকা। ২০১৩–২০১৭ সালের মধ্যে মোট ৩৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, বেস্ট হোল্ডিংস শেয়ারের দাম বুক বিল্ডিংয়ে শেয়ারপ্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারিত হলেও রেস ফান্ডগুলো কিনেছে ৬৫ টাকায়।
বেস্ট হোল্ডিংস বন্ডের ট্রাস্টি ছিল গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। রিজিস্ট্রার ছিল রেস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট। ২০০১ সালের মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী একই অ্যাসেট ম্যানেজারের একাধিক স্কিমে বিনিয়োগ করা নিষিদ্ধ। রেস এটি ভঙ্গ করেছে। নতুন বিনিয়োগ ও উত্তোলনের ব্যাংক লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য ফান্ডগুলো জমা দেয়নি। পদ্মা ব্যাংক এবং রিজেন্ট স্পিনিং মিলস-এও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
রেস বনাম আইসিবি: পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
- রেস: অভিযোগ আদালতে মামলাধীন। আদালত অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে ফান্ড অপারেশন চলতে দিয়েছে। অনেক বিষয় মিডিয়াতে প্রকাশ আদালত অবমাননা ও উদ্দেশ্যমূলক।
- আইসিবি: তদন্ত কমিটি অনিয়ম শনাক্ত করেছে। আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ কেবল কার্যক্রম স্থিতির জন্য, অভিযোগ খারিজ হয়নি। রেস অজুহাত হিসেবে স্থিতাবস্থা ব্যবহার করছে।
- রেস: বিএসইসি চারটি নন-লিস্টেড সিকিউরিটিজ অনুমোদন দিয়েছে, তাই কোনো বিধি লঙ্ঘন হয়নি।
- আইসিবি: রেস বিনিয়োগ বিধিমালা ও ট্রাস্ট ডিডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখেনি। বিশেষ অডিটে বাধা দিয়েছে।

