সুনামগঞ্জের বাণিজ্যিক এলাকা তাহিরপুরে খাস কালেকশন নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা জুনাব আলীর সহায়তায় দুটি নৌঘাট থেকে কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন। কাগজপত্রে উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত খাস কালেকশন আদায় দেখালেও মূলত এখানে চলে চাঁদাবাজি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই চাঁদাবাজিতে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীও জড়িত ছিলেন। এর আগেও দুই বছর ধরে একই পদ্ধতিতে ঘাটের বাণিজ্য পরিচালিত হয়েছে। তখনকার ইউএনওর অনুমোদন ছিল। ওই সময়ের চাঁদাবাজির টাকার ভাগ সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও রনজিত চন্দ্র সরকারের কাছেও গেছে।
বৈশাখ মাসে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন শ্রীপুর বাজার ঘাট ও ডাম্পের বাজার ঘাট থেকে খাস কালেকশন নেওয়ার উদ্যোগ নিলে দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় প্রভাবশালী বিএনপি নেতা জুনাব আলীর ওপর। দুটি ঘাটকে ষোল আনার হিসাবে ভাগ করা হয়। শ্রীপুর বাজার ঘাটে প্রতি আনায় ৭ লাখ টাকা করে ১৬ ভাগে বণ্টন করা হয়। ডাম্পের বাজার ঘাটেও একইভাবে প্রতি ভাগে ৪ লাখ টাকা হিসাব করা হয়। বড় অংশ এরপর তুলে দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
প্রতিটি নৌকা থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন অসংখ্য শ্রমিক। তারা জানান, সরকারকে জমা দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র টাকা। প্রতি মাসে আদায় করা হচ্ছে ১৪২৯ সনের ইজারা মূল্যের তুলনায় কম।
শ্রীপুর বাজার নৌঘাটে সর্বশেষ ইজারায় রাজস্ব হয়েছে ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছরে বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত খাস আদায় হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এতে সরকার পাবেন ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা কম। ডাম্পের বাজার নৌঘাটে একইভাবে, সর্বশেষ ইজারা মূল্য ১৮ লাখ। চলতি তিন মাসে খাস আদায় হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। গড়ে মাসে ৮৩ হাজার। এতে বছরে ৮ লাখ ৪ হাজার টাকার রাজস্ব কম হবে।
তাহিরপুরের সীমান্তের তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি হয়। নদীপথে নৌকাগুলো দেশে পৌঁছালে শ্রীপুর ও ডাম্প ঘাটে চাঁদাবাজির শিকার হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নৌকায় ওঠার সময় শ্রমিকদের থেকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত দাবি করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমীর আলী জানিয়েছেন, দুই ঘাটের খাস কালেকশনে গত এক বছর দুই গ্রুপ ভাগ করেছে। শ্রীপুর বাজার থেকে ৬৩ লাখ, ডাম্পের বাজার থেকে ২৭ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে কারা এই টাকা নিয়েছে তা বলতে পারেননি।
এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি বলেন, ঘাটে আটজন করে লোক আছে, যারা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক ও কামরুজ্জামান কামরুলের সমর্থক। যুক্তরাজ্যে থাকা কামরুজ্জামান কামরুল ও সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক দুজনেই এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন।
এক তহশিলদার জানান, খাস কালেকশন ‘ডিল’ করার জন্য তাঁকে বলা হয়েছিল। তবে তিনি নদীতে চাঁদা আদায়ের সঙ্গে যুক্ত নন। ইউএনওর কমিটির মাধ্যমে খাস কালেকশন নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, কে টাকা তুলেছে তা জানতেন না। খাস আদায় তহশিলদার করেন। যদি কোনো অনিয়ম হয়, তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।