নোয়াখালী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সালমা আক্তার নিয়োগকালীন ৩১ মাসে কোটি কোটি টাকা লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয়, বরং কলেজের দায়িত্বশীল কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের ওপর নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি কর্মকর্তার মতে, দুর্নীতির ক্ষেত্রে সালমা আক্তারের কর্মকাণ্ড দৃষ্টান্তমূলক। “একজন শিক্ষক কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা লুটে নিতে পারে, তা বুঝতে হলে তদন্ত প্রতিবেদন দেখা ছাড়া সম্ভব নয়,” তিনি বলেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, অধ্যক্ষ সালমা আক্তার তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কলেজে দায়িত্ব পালন করার সময় শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভর্তি, জুনিয়র সহকর্মীদের সম্মানি ও বিভিন্ন তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
বিশেষ কিছু অভিযোগ:
-
দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় ২৩৭ জন অতিরিক্ত ভর্তি করে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ।
-
জুনিয়র সহকর্মীর সম্মানি ৫৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ।
-
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং নম্বরপত্র জালিয়াতি।
-
জুনিয়র সহকর্মীকে রাজনৈতিক লেবেল দিয়ে হয়রানি।
-
কলেজের কক্ষে গরুপালন ও বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই গাছ কেটে বিক্রি।
-
ছাত্রলীগ নেতাদের কলেজের পুকুর লিজ প্রদান।
-
শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, উন্নয়ন, বিজ্ঞান ক্লাব, লাইব্রেরি, সাহিত্য সংস্কৃতি, রোভার্স, ম্যাগাজিন, আইটি, রেড ক্রিসেন্ট ও চিকিৎসা তহবিলসহ অন্তত ২২টি খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ।
২০২২ সালে কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক ২৫টি অভিযোগ উত্থাপন করেন। কিন্তু তখনকার শিক্ষা সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তদন্ত আটকে দেন এবং অভিযোগকারীকে হয়রানি করা হয়।
সরকার পরিবর্তনের পর মাউশির নতুন মহাপরিচালক তদন্তের নির্দেশ দেন এবং তারপরই সালমা আক্তারের দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র সামনে আসে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর গণমাধ্যমে “ভর্তি বাণিজ্যে বিপুল অর্থ আয় অধ্যক্ষের” শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।
এই ঘটনাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের জন্য এক বার্তাস্বরূপ—শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা অপরিহার্য।