চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাম্প্রতিক কেনাকাটায় বাজারদরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছোট স্ক্রু থেকে শুরু করে কম্পিউটার ও এসি পর্যন্ত সব সরঞ্জাম কেনায় অস্বাভাবিক দাম দেখানো হয়েছে।
এক ইঞ্চি থেকে দেড় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি স্ক্রুর বাজারদর সর্বোচ্চ তিন টাকা। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড তা কিনেছে প্রায় আট টাকা দরে। গত জুলাইয়ে ল্যান ওয়্যারিংয়ের জন্য এক হাজার স্ক্রু কিনতে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ টাকা।
বোর্ডের সপ্তম তলার কম্পিউটার সেলে ল্যান ওয়্যারিংয়ের কাজে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪২৫ টাকা। ১৪ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে এই টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে নেটওয়ার্ক সুইচে—পাঁচটি সুইচ কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। বাজার যাচাইয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি যন্ত্রপাতিই বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কেনা হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে ইসলাম ট্রেডিং থেকে বোর্ড কিনেছে পাঁচটি কম্পিউটার ও ৪০টি টোনার। প্রতিটি কম্পিউটারের দাম ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি টোনার সাড়ে ৩ হাজার টাকা। অথচ বাজারে একই কনফিগারেশনের কম্পিউটার মনিটরসহ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা এবং টোনার ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায় পাওয়া যায়। ফলে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার এই কেনাকাটায় আড়াই লাখ টাকার বেশি অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন দপ্তরের জন্য ১০টি গ্রি ব্র্যান্ডের এসি কিনেছে। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। কার্যাদেশে ২ টনের এসির দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং দেড় টনের এসির দাম ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে এই মডেলের এসি পাওয়া যায় ৫৮ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। ফলে কেবল এসি কেনাকাটায় ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলাম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী শামসুল ইসলাম বলেন, “বাজার যাচাই করে সমন্বয় করে কোটেশন দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় কাজ পেয়েছি।”
বোর্ডের মান যাচাই কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম জানান, তাঁদের দায়িত্ব কেবল কার্যাদেশ অনুযায়ী পণ্য এসেছে কি না তা দেখা। দাম বা ব্যয়ের বিষয় তাঁদের এখতিয়ার নয়।
বোর্ড চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। ফোনে সংযোগ পাওয়া গেলে তিনি বলেন, “ঝামেলায় আছি, পরে কথা বলব।” এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বোর্ড সচিব সামছু উদ্দিন আজাদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনকেও পাওয়া যায়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, “শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পাঠ দেন। অথচ নিজেরাই সরকারি কেনাকাটায় দাম বাড়িয়ে দুর্নীতি করছেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

