চট্টগ্রামে অভিনব এক প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কথিত ভারতীয় পরমাণু বিজ্ঞানী পরিচয়ে আবুল কালাম আজাদ ফাইয়ুম নামের ব্যক্তি শিল্পপতি আবু বক্কর চৌধুরীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। মুহূর্তেই কথার জাদুতে বশ করতে সক্ষম আজাদ অর্ধকোটি টাকার প্রাইভেটকারে চড়ে নিজেকে ‘ব্যক্তিত্ববান’ প্রমাণ করেন। তিনি শিল্পপতিকে দেখান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ম্যাগনেটিক কয়েনের গুণাগুণ। দাবি করেন, একটি কয়েন বিক্রিতেই মিলবে কয়েকশ কোটি টাকার ডলার। ফাঁদে পড়ে শিল্পপতি আবু বক্কর চৌধুরী প্রাথমিকভাবে তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন।
এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন লাকসাম শিল্প গ্রুপের কথিত স্বত্বাধিকারী মাহাবুবুল আলম। তিনি ম্যাগনেটিক কয়েন সংগ্রহে প্রাথমিক অর্থ লগ্নি করেছেন বলে জানা গেছে। আমেরিকার টেক্সাসের একটি কোম্পানির সঙ্গে কয়েন বিক্রির আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে বলে দাবী করেন কথিত কান্ট্রি ডিরেক্টর তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা। প্রতারণার ধরন ছিল সূক্ষ্ম: কেউ ‘বিজ্ঞানী’, কেউ ‘কান্ট্রি ডিরেক্টর’, কেউ গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক সেজে শিল্পপতিকে ফাঁদে ফেলেন। বিদেশ থেকে ডলার আনার জন্য একটি বৈধ ব্যাংক হিসাবের প্রয়োজন দেখিয়ে বায়েজিদ গ্রুপের ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া হয়। এরপর দুই দফায় তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
দীর্ঘ ১০ বছর তদন্তের পর গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগে মাহাবুবুল আলম (সিরাজগঞ্জের বেলকুচি), তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা (নওগাঁর মান্দার), আবুল কালাম আজাদ কাইয়ুম (মুন্সীগঞ্জের লৌহজং), শীতল বাবুর (মৌলভীবাজারের বড়লেখা) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা সঠিক পরিচয় পাওয়া না যাওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে।
সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান জানান, আগে ছয়জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। তাদের কাজ সমন্বয় করে প্রতারণার বিস্তারিত অভিযোগপত্র তৈরি করা হয়েছে। চারজন শনাক্ত হলেও বাকিদের চিহ্নিত করা যায়নি। বায়েজিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রতারকরা কথার জাদুতে স্যারকে ফাঁদে ফেলেন। কয়েন বিক্রি করে লাভের একটি অংশ কোম্পানিকে দিতে চেয়েছিলেন। সরল বিশ্বাসে শিল্পপতি তিন কোটি ৪০ লাখ টাকা ও কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ব্যবহারের অনুমতি দেন। প্রতারণায় অন্তত ১০ জন অংশ নিয়েছিল, তবে সিআইডি চারজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে।
২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট লাকসাম গ্রুপের কথিত মালিক মাহাবুবুল আলম বায়েজিদ গ্রুপের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন ১২ জন কথিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। আমেরিকান কোম্পানির কান্ট্রি ডিরেক্টর পরিচয়ে তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা দাবি করেন, তাদের কাছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ম্যাগনেটিক কয়েন আছে। মার্কিন কোম্পানির কাছে বিক্রির আলোচনা চূড়ান্ত, কিন্তু বৈধ ব্যাংক হিসাব না থাকায় প্রক্রিয়া আটকে। তারা বায়েজিদ ষ্টিল লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতে চায়। ডলার জমা হলে শুধু লভ্যাংশই নয়, ব্যবসায় বিনিয়োগের সুযোগও থাকবে– এমন প্রলোভন দেখিয়ে শিল্পপতিকে ফাঁদে ফেলে প্রতারকরা।
শেষ পর্যন্ত কথিত প্রকৌশলী নুরুল আমিনকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং মাহাবুবুল আলম, তুহিন ও হাসানকে দুই কোটি টাকা নগদ দেন আবু বক্কর। পরবর্তীতে ফোন করলে প্রতারকেরা ফোন বন্ধ পেয়ে শিল্পপতি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।