শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষকে একের পর এক অনিয়ম, ঘুষ ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ করে ছাড়পত্র পাওয়া পর্যন্ত নানা অজুহাতে অর্থ আদায়ের দীর্ঘ তালিকা তৈরি হয়েছে।
হাসপাতালে রোগী নিয়ে পৌঁছানোর পরপরই ১০ টাকার টিকিট কিনতে হয়। কিন্তু রোগীকে ভর্তি করতে চাইলে ওই টিকিটের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২০ টাকা। এরপর রোগীকে হুইলচেয়ারে ওয়ার্ডে নিতে চাইলে দিতে হয় ১০০ টাকা, আর ট্রলিতে নিতে হলে ২০০ টাকা। রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি আত্মীয় প্রবেশ করলে প্রতিজনকে দিতে হয় ২০ টাকা করে। বেড নিশ্চিত করতে দিতে হয় আরও ৫০ টাকা, না হলে রোগীকে মাটিতে শুয়ে থাকতে হয়।
ভর্তি হওয়ার পর শুরু হয় চিকিৎসা খরচের বোঝা। প্রথম দিনেই দেওয়া হয় ন্যূনতম চারটি পরীক্ষা, সঙ্গে এক বস্তা স্যালাইন ও বিভিন্ন ওষুধ। রিপোর্ট আসার পর নতুন ডাক্তার এসে আরও পরীক্ষা লিখে দেন। এভাবে প্রতিদিন ডাক্তার বদল হয় এবং পরীক্ষার তালিকাও দীর্ঘ হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় রোগীকে ওয়ার্ড থেকে নেওয়ার সময় হুইলচেয়ারে ১০০ টাকা বা ট্রলিতে ২০০ টাকা ওয়ার্ডবয়কে দিতে হয়। প্রতিদিনই নতুন নতুন ওষুধ কিনতে বাধ্য হন রোগীরা। রোগীর আত্মীয়রা দেখা করতে এলে দারোয়ানকে ‘খুশি’ করতে হয়।
সব পরীক্ষা শেষে অপারেশনের সময় রোগীর স্বজনদের ৬০০০ থেকে ৭০০০ টাকার ওষুধ কিনে সরাসরি ডাক্তার বা নার্সের হাতে দিতে হয়, যা ফেরতযোগ্য নয়। অপারেশনে রোগী মারা গেলে অর্থ ও মানুষ—সবই শেষ হয়ে যায়। আর অপারেশন সফল হলে থিয়েটারের বয়, দারোয়ানসহ আরও অনেককে খুশি করতে হয়। পরে প্রতিদিন ড্রেসিং ও খাওয়ার ওষুধের খরচ যোগ হয়।
শেষ পর্যন্ত রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেতে চাইলে আবারও শুরু হয় ‘খুশি করার’ পালা। নার্স, দারোয়ান ও ওয়ার্ডবয়কে অর্থ দিতে হয়।
এভাবে হাসপাতালের প্রতিটি ধাপে রোগী ও তাদের পরিবারের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা অনেকের জন্য চিকিৎসা সেবাকে বোঝায় পরিণত করছে।