চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে সার আমদানিতে সরকারের নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে সিন্ডিকেটকৃত ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমে এসেছে এবং সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রথম লটে ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন সার আমদানিতে কৃষি মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার ডলার সাশ্রয় করেছে, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সমান।
উদাহরণস্বরূপ, ৩০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানি করতে চাওয়া বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতি টন ব্যয় নীতিমালা পরিবর্তনের আগে ৭৯৫ ডলার ছিল, এখন ৬৮৮ ডলার। ফলে ৩০ হাজার টনের আমদানি থেকে তাদের মুনাফা প্রায় ৪০ কোটি টাকা কমেছে। অন্যদিকে, নোয়াপাড়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও মৌনতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানিতে প্রতি টন বেশি দাম দেখিয়েছিল ৯৫১ ডলার, যা নীতিমালা পরিবর্তনের পর কমে ৮৭৪ ডলার হয়েছে। ফলে তাদের মুনাফা কমেছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রশিদ খান মামুন ব্যাংকক থেকে বলেন, “সরকার সার আমদানিতে নীতিমালা পরিবর্তন করে ব্যবসায়ীদের মুনাফা কমিয়ে বড় ধরনের সাশ্রয় করেছে। তবে দেশের সার আমাদানে আরও কিছু নীতিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সার আমদানিতে সর্বনিম্ন দরদাতার ভিত্তিতে কার্যাদেশ দেওয়ায় সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় কমেছে। আগে একাধিক দালাল বা সিন্ডিকেট প্রতিটি দেশের জন্য ভিন্ন দর দেখিয়ে টনপ্রতি ২০–১৫০ ডলার বেশি গুনতে হতো। বর্তমান সরকার সিন্ডিকেট ভেঙে প্রতিটি সার সংগ্রহে সর্বনিম্ন হার নির্ধারণ করেছে।
চলতি অর্থবছরে আমদানি হওয়া প্রধান সারগুলো হলো: ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি (পটাশ)। ইউরিয়া সার বিসিআইসি আমদানি করে, বাকি সার বিএডিসি মাধ্যমে আসে। গত বছর দেশে ৬৫ লাখ টন সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ, টিএসপি ৭.৫ লাখ, ডিএপি ১৬.৫ লাখ এবং এমওপি ৮.৫ লাখ টন। দেশের উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে গত দুই অর্থ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে। চলতি বছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। তবে আমদানি ব্যয় কমালে এই অর্থের প্রয়োজন অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, “আমরা সার ডিলার সিন্ডিকেট ভেঙে সার আমদানিতে স্বচ্ছতা এনেছি। সাশ্রয়কৃত অর্থ কৃষকের সুবিধার জন্য অন্য খাতে ব্যবহার করা হবে, যেমন যান্ত্রিকীকরণ, দুর্যোগকালীন বিশেষ প্রণোদনা ও অন্যান্য কৃষি উপকরণে।”
বর্তমান নীতিমালা অনুসারে সার আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দরদাতার কার্যাদেশ নিশ্চিত করা, ডিলারের সংখ্যা বৃদ্ধি, সব ধরনের সার এক জায়গায় সহজলভ্য করার ব্যবস্থা ও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এতে ভবিষ্যতে সার আমাদানে একচেটিয়া আধিপত্য এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা কঠিন হবে।

