টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এনামুল হক টানা ৯ বছর একই কর্মস্থলে বহাল আছেন। তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম এবং সিন্ডিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তিনি নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মূল কারিগর।
সরকারি বিধি অনুযায়ী বদলিযোগ্য কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ তিন বছর একই স্থানে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অথচ অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে এনামুল হক বারবার বদলি স্থগিত করে ঘাটাইলেই বহাল থেকেছেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের ৭ আগস্ট কালিহাতী থেকে বদলি হয়ে ১৬ আগস্ট এনামুল হক ঘাটাইলে যোগ দেন। এরপর থেকেই তার দপ্তরে দুর্নীতির মহোৎসব শুরু হয়। নামসর্বস্ব মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বিশেষ করে ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত ডা. মতিউর রহমানের সময় অনিয়ম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দ বাস্তবায়নের বদলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগবাটোয়ারা হতো।
২০১৭ সালের ৩ জুন যুগান্তরে প্রকাশিত ‘ঘাটাইলে কর্মসৃজন প্রকল্পে লুটপাট’ এবং ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ‘ভুয়া প্রকল্পে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এতে প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। তদন্তে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়লেও তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিললে এনামুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের ১ কোটি ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪০০ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হয়। ওই সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তাও তৎপরতা চালান।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে এনামুল হককে গোপালপুরে বদলি করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বগুড়ায় বদলির নির্দেশ আসে। তবে অদৃশ্য কারণে সেই আদেশ স্থগিত হয়। অবশেষে ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি আবার ঘাটাইলেই ফিরে আসেন এবং তখন থেকে টানা ৯ বছর একই পদে বহাল আছেন। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতির টাকায় তিনি ঘাটাইল মেইন রোডে খাদ্যগুদামের বিপরীতে দোকানঘরসহ কোটি টাকার জমি কিনেছেন। বিলাসবহুল গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে এনামুল হক বলেন, “আমার কিছু কাগজপত্র আছে। কর্তৃপক্ষ যদি আমার ভুল প্রমাণ করে শাস্তি দেয়, চাকরিও চলে গেলে কিছু বলব না।” তবে পরে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাননি। অবৈধ আয়ে দোকানঘর কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়েছিল। তা ফেরত দিতে না পারায় দোকানের ভাড়া দিয়ে টাকা নিচ্ছি।” তবে জমির বিক্রেতা আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, ওই জমি এনামুল হক ও জুয়েল খান নামে এক ব্যবসায়ী কিনেছেন।
বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস-২০২৫-এর ৭(ক) অনুযায়ী বদলিযোগ্য কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি একই স্থানে থাকতে পারেন না। অথচ এনামুল হক ঘাটাইলে টানা ৯ বছর বহাল। এতে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে—কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কি প্রশাসন নীরব?
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেননি। তবে ঘাটাইল ইউএনও মো. আবু সাঈদ বলেন, “এটা আমার আওতার বাইরে, এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।”

