তিন মাসের ব্যবধানে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এ সময় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নতুন করে খেলাপি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির দখলেই রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৫৭ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ চিত্র উঠে আসে। বৈঠকে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কোনো ব্রিফিং না হলেও সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপস্থাপনায় খেলাপি ঋণের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতি, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ও প্রভিশন ঘাটতির তথ্য তুলে ধরা হয়।
জুন শেষে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক মিলিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে এ পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৪৫ শতাংশ। অথচ আন্তর্জাতিক নিয়মে মোট ঋণের ৫ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি গ্রহণযোগ্য।
প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির হিসাবও তুলে ধরা হয়। ছয় ব্যাংকের এ ধরনের ১২০ খেলাপির ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। বৈঠকে এসব বড় খেলাপির কাছ থেকে ঋণ আদায়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। মামলাজট দ্রুত নিষ্পত্তিতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আরেক বৈঠকে খেলাপি ঋণ উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি জটিলতা এড়াতে প্রয়োজনে প্রভাবশালী খেলাপিদেরও গ্রেপ্তার করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ নিষ্পত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাবও আলোচিত হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকের অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। জুন শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ খেলাপি, পরিমাণ ৭২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে এ পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। জনতার মূলধন পর্যাপ্ততার হার ঋণাত্মক ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, যেখানে নিয়ম অনুযায়ী এটি অন্তত ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থাকা উচিত। অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। জুন শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণের ২০ শতাংশ খেলাপি হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হারটি ছিল ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ।
মূলধন সংরক্ষণেও সোনালী ব্যাংক তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে। জুন শেষে এর মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকটির মূলধন মাত্র ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির দখলেই রয়েছে মোট খেলাপির ৪০ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে এ হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ মূলধন সংরক্ষণের হার থাকার কথা ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, সেখানে রূপালীর মূলধন মাত্র ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) আর্থিক সূচকেও মারাত্মক অবনতি হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়।

