বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬২ হাজার একর। এর মধ্যে অনেক অংশ দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলেও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত রেলের ১৪ হাজার ৪৭৩ একর জমি লিজ বা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে শর্ত ভেঙে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এতে রেলওয়ে ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৭৯ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়কে বর্তমানে ২৮ শতক জমি প্রতীকী মূল্যে দেয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১ টাকায়। বাজারমূল্যে এ জমির দাম ৫০ কোটি টাকারও বেশি। এই সিদ্ধান্তে রেলের কর্মী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, কার্যালয় ভবনের চারপাশে রেলের অব্যবহৃত ভূমি থাকা সত্ত্বেও কর্মচারীদের বাসাবাড়ি সরিয়ে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান বাসাবাড়ি থেকে মাসে ৮০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় হলেও বরাদ্দে নেয়া হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা। জমিতে প্রচার গাছও রয়েছে। ফলে রেলের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।
রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় দুই দশক আগে রেলের জমিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়। পাশে রয়েছে ২৭ দশমিক ৫৫ শতক জমিতে রেলের পাঁচটি কর্মচারী বাসা। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর জমিটি নিজেদের নামে বরাদ্দের আবেদন করে আসছে। কিন্তু রেলওয়ের আপত্তির কারণে এতদিন তা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি সরকারি নির্দেশে প্রতীকী মূল্যে জমি বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা সত্ত্বেও ভূসম্পত্তি বিভাগ পরিবেশ অধিদপ্তরকে মাত্র ১ হাজার ১ টাকায় বরাদ্দ দিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ে আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে প্রতীকী মূল্যে জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশন, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, লেডিস ক্লাব ও অফিসার্স ক্লাব। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এ জমিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং বরাদ্দকালে দেয়া শর্তগুলো মানছে না।
চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলে বরাদ্দ দেয়া জমিগুলো ন্যূনতম ১ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার প্রতীকী মূল্যে দেয়া হয়েছে। ক্লাব, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রেখে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন থেকে সরকারি জমি কোনো সংস্থাকে প্রতীকী মূল্যে দেয়া হবে না। জমি নিতে চাইলে যথাযথ বাজারমূল্য দিতে হবে। প্রতীকী মূল্যে জমি দিলে যথাযথ ব্যবহার হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ১০ একরের প্রয়োজন হলেও প্রতীকী মূল্যের কারণে ১০০ একর দাবি করা হয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেয়া জমি রেলওয়ে মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে ২৭ জুলাই অনুমোদন পেয়েছে। প্রধান ভূসম্পত্তি কার্যালয় থেকে প্রধান প্রকৌশলী কার্যালয়ে চিঠি দেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান জমিতে গাছপালার জন্য ১৭ হাজার ৬ টাকা, বাসাবাড়ি ও অবকাঠামোর নিলাম মূল্য ৭ লাখ ৮ হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের বাসা স্থানান্তর ও মেরামতের জন্য ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৪ টাকা রেলওয়েকে দিতে হবে। তবে রেলের কর্মচারীদের জন্য বাসা পুনর্নির্মাণে কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মাস্টারলেন মীর সমাজকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা এবিএম মীর শফিকুল আলম বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০ সালে ৩ হাজার বর্গফুট জমি বাজারমূল্যে চেয়েছিল। তখন রেলওয়ে তা দেয়নি। এখন ব্যবহৃত ও মাসে ৮০ হাজার টাকা আয়ের জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবউল করিম জানান, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন আগে জমি নিয়ে কার্যালয় স্থাপন করেছে। সম্প্রতি ২৭ শতকের বেশি জমি প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দের আবেদন করে। মহাপরিচালকের অনুমোদনের পর প্রকৌশল বিভাগ মূল্যায়ন শেষে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।’
নথিপত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ১০ এপ্রিল জমি বরাদ্দের আবেদন আসে। ২৭ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূসম্পত্তি নীতিমালা, ২০২০-এর ধারা অনুযায়ী জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কোড-১৯৬২-এর শিথিল শর্ত দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনকেও পাওয়া যায়নি।

