মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক দপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) আলমাছ উদ্দিন ঘুস বাণিজ্যের আখড়া গড়ে তোলেন। এই বছরের ৮ জানুয়ারি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজশাহী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলীকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও ১০ মাসেও তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেনি। অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এখনো আলমাছের ইশারায় চলছে রাজশাহী আঞ্চলিক দপ্তর।
এদিকে মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান এবং সহকারী পরিচালক (কলেজ) আলমাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ৪ মাসেও শেষ হয়নি। অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে মাউশির মহাপরিচালককে (ডিজি) নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৫ মে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৫ জুন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন মাউশির ডিজি। মাউশির দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের কোনো প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত জমা হয়নি।
পতিত সরকারের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দাপট দেখিয়ে মাউশির তৎকালীন পরিচালক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) আলমাছ উদ্দিন ঘুস বাণিজ্যের আখড়া গড়ে তোলেন। এমপিওভুক্ত করতে প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে তারা ঘুস আদায় করেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বিশ্বজিৎকে মাউশি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন দায়িত্ব পেয়ে পরিচালক প্রফেসর আসাদুজ্জামানও ওই সিন্ডিকেটের অংশ হয়ে পড়েন। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধেও ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন।
সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী কলেজ শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা মাউশিতে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালের নভেম্বরে যোগদানের পর থেকে আলমাছ উদ্দিন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করার সময় ঘুসের বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহু নাম এমপিওভুক্ত করা হয়। কাউকে দেওয়া হয় ইনক্রিমেন্ট অথবা পদোন্নতি। তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আলমাছ উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এটা প্রমাণের জন্য অভিযোগপত্রের সঙ্গে একটি স্ক্রিনশটও দাখিল করা হয়। এখনো নিজের জায়গাতেই আলমাছ আছেন।
অভিযোগ-সাবেক পরিচালককে হাত করে যেমন কার্যহাসিল করতেন তেমনি বর্তমান পরিচালককেও হাত করেছেন আলমাছ। আলমাছের ইশারাতেই চলছে রাজশাহী আঞ্চলিক দপ্তর। এর আগে শিক্ষকদের ফাইল আটকে ঘুস আদায়কারী উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেনকে বদলি করা হয়। তদন্তের নির্দেশ আসে তার বিরুদ্ধেও। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধেই কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই বিষয়ে দুই তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জহুর আলী জানান, তদন্তে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু কমিটির বাকি সদস্যরা প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তাঁর কাছে পাঠাননি। ফলে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। তবে শিগগিরই প্রতিবেদন দিতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি বলেন, দুটি তদন্ত কমিটির কাজ করতে গিয়ে কিছু সময় বেশি গেছে। তদন্ত কমিটির সদস্য মাউশি ঢাকার উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে গেছে। খুব দ্রুততম সময়েই আমরা এটি জমা দিতে পারব। কিছু কারিগরি প্রয়োজনে কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। তদন্ত কমিটির অপর সদস্য মাউশি ঢাকার সহকারী পরিচালক সফিউল বাসার বলেন, তদন্ত কার্যক্রম কী অবস্থায় আছে, তা আমার জানা নেই।
মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) ফজলুল হক মনি বলেন, একটি তদন্ত ১০ মাস হওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি তাদের কারণ উল্লেখ করে সময় বাড়াতে পারেন। তবে তারা কোনো সময় বাড়ানোর আবেদন করেননি। প্রতিবেদনও দেননি। এসব দায়িত্বে অবহেলার নামান্তর। এসব অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে গতকাল সারা দিন সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিনের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান ফোন ধরে কথা বলেননি।