দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক হওয়ার পথে নেই। বরং সাম্প্রতিক সময়ে খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বেড়েছে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল, বন্দর নগরী থেকে দূরবর্তী অঞ্চল—সবত্রেই সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্কিত। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৫৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে প্রতি মাসে ৪৪৫টি মামলার তুলনায় ৯৫টি বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অপরাধের এই বৃদ্ধিতে মূল কারণগুলো হলো সামাজিক বৈষম্য, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। এছাড়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদী দুর্বলতা, পুলিশের পর্যাপ্ত মানবসম্পদ ও প্রশিক্ষণের অভাবও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। শুধু পুলিশের পদক্ষেপে আর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না; প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রুত বিচার নিশ্চিতকরণ।
সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ৪,৩১৬টি হত্যা ও দস্যুতা সংক্রান্ত মামলা হয়েছে। ডাকাতি-দস্যুতার মামলা হয়েছে ১,৭০২টি এবং হত্যার মামলা ২,৬১৪টি। আগের বছরের তুলনায় প্রতিমাসে মামলা বেড়েছে ৯৫টি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি, কারণ অনেক ঘটনা পুলিশের কাছে রিপোর্ট হয় না।
চাঁদাবাজি এখন এক ভয়ঙ্কর সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজধানী ও দেশের অন্যান্য শহরে প্রকাশ্যে বা গোপনে চাঁদা আদায়, মব সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে ভীতিকর পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছে। নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ৬৪ জেলা জুড়ে চাঁদাবাজি ও অপরাধ দমনের জন্য বিশেষ অভিযান চলছে। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছেন, অপরাধীরা ধরা পড়লেও শাস্তি না পেলে তারা পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হয়।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। বিভিন্ন এলাকায় যেমন মোহাম্মদপুর, সাভার, গাজীপুর, মিরসরাই ও চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি-বিরোধী আন্দোলন দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি অপরাধ দমন ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরও বড় হুমকির মুখে পড়বে।
অপরাধ, চাঁদাবাজি ও হত্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি শুধু পুলিশের কাজ নয়; এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। দ্রুত বিচার, সামাজিক সচেতনতা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

