পাবনার ঈশ্বরদীতে জনতা ব্যাংকের পাকশী শাখার ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ আট দিন ধরে নিখোঁজ। ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর থেকেই তার কোনো খোঁজ নেই। জানা গেছে, এই টাকায় তিনি নিজের ঋণ পরিশোধ করেছেন।
গত ৫ অক্টোবর দুপুরে জনতা ব্যাংকের ঈশ্বরদী করপোরেট শাখা ও দাশুড়িয়া শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা তোলেন খালেদ সাইফুল্লাহ। এরপর তিনি পাকশী শাখায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন। তিনি ঈশ্বরদী পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফুর শেখের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদ সাইফুল্লাহ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। সম্প্রতি রাজশাহী শহরে ৭০ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণে পড়েন। পাওনাদারদের চাপ সামলাতে তিনি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা তুলে নেন।
জনতা ব্যাংক ঈশ্বরদী করপোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. মোহছানাতুল জানান, ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সব কাগজপত্রে সই শেষে ৫ অক্টোবর বেলা পৌনে ১২টার দিকে এক কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয় খালেদ সাইফুল্লাহর কাছে। এর আগে তিনি দাশুড়িয়া শাখা থেকে আরও ৩০ লাখ টাকা তোলেন। এরপর আনসার সদস্য মাহবুব ও চালক ইসমাইল হোসেনকে নিয়ে প্রাইভেটকারে পাকশীর উদ্দেশে রওনা দেন। সেই থেকে খালেদ সাইফুল্লাহর ফোন বন্ধ ও তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থাপক খালেদ সাইফুল্লাহ ফ্ল্যাট ক্রয় ও তেলের ব্যবসার অজুহাতে গ্রাহক, প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা ধার নেন। পরে ব্যাংক থেকে উত্তোলিত টাকায় তিনি পাওনাগুলো পরিশোধ করতে শুরু করেন।
সেদিনই তিনি পাবনা জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেদায়েতুল্লাহ হককে ১৫ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে এক লাখ, বিএনপি নেতা ও ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল ও আরমানকে দুই লাখ, লক্ষ্মীকুন্ডার ডালিয়া বেগমকে পাঁচ লাখ এবং পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিএনজিচালক হাফিজুল ইসলামকে নয় লাখ টাকা দেন।
এছাড়া শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে এক ব্যবসায়ীকে দুই লাখ টাকা ও কারুপল্লী রেস্টুরেন্টে বসে আরও কয়েকজনের টাকা পরিশোধ করেন তিনি। থানা গেটের কাছে বাটার ফ্লাই কোম্পানির শোরুম ও হান্নানের মোড়ের এক মুদি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে তিনি পাওনাদারদের টাকা দেন।
রাজশাহী শহরে কেনা ফ্ল্যাটের বকেয়া পরিশোধেও ব্যাংকের অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাটার ফ্লাই কোম্পানির ঈশ্বরদী শাখার ম্যানেজার আবু সায়েম বলেন, “ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে খালেদ সাইফুল্লাহর ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল, তাই তিনি শোরুমে এসেছিলেন বলে ধারণা করছি।”
লক্ষ্মীকুন্ডার ডালিয়া খাতুন জানান, “তার (খালেদের) কাছে আমার ১২ লাখ টাকা পাওনা ছিল। সেই টাকার মধ্যে সেদিন পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন।”
ফুল ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, “প্রতিবেশী হওয়ায় তিনি আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। আরমানের কাছ থেকেও এক লাখ নিয়েছিলেন। পরে আমাদের হাতে দুই লাখ টাকা দেন।”
তবে সিএনজিচালক হাফিজুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।
আইনজীবী হেদায়েতুল্লাহ হক জানান, “খালেদ আমার পাশের বাড়ির মানুষ। তেলের ব্যবসার কথা বলে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকার অংশ হিসেবে তার স্ত্রীকে কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন।”
ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহছানাতুল বলেন, “খালেদ সাইফুল্লাহকে খুঁজে বের করতে তিনটি দল কাজ করছে। তাকে পাওয়া গেলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।”
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ স ম আব্দুন নূর জানান, ঘটনাটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।
দুদকের পাবনা কার্যালয়ের উপপরিচালক সাধন সূত্রধর বলেন, “ব্যাংকের টাকাসহ নিখোঁজ ব্যবস্থাপকের বিষয়ে অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগের পর তদন্ত শুরু হবে।”