ভারতের পাঞ্জাবে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন রোপার রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) হরচরণ সিং ভাল্লার। আজ বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। এ সময় তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, বিলাসবহুল গাড়ি, দামি হাতঘড়ি ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সিবিআইয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে—ভল্লার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মামলা নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে ঘুষ দাবি করেন। তিনি কৃষ্ণা নামের এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ওই টাকা নেন।
পাঞ্জাবের ফতেহগড় সাহিবের ব্যবসায়ী আকাশ বাট্টা পাঁচ দিন আগে সিবিআইয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ডিআইজি ভাল্লার তাঁকে ব্যবসাসংক্রান্ত একটি ভুয়া মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে ৮ লাখ রুপি দাবি করেন। পাশাপাশি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষও চান।
সিবিআইয়ের এফআইআরে উল্লেখ আছে, ভাল্লার নির্দেশ দেন টাকা যেন কৃষ্ণার মাধ্যমে দেওয়া হয়। তদন্তকারীরা তাদের কথোপকথনের রেকর্ড সংগ্রহ করেন। সেখানে কৃষ্ণাকে বলতে শোনা যায়—‘আগস্টের টাকা আসেনি, সেপ্টেম্বরের টাকাও আসেনি।’
এর পর প্রাথমিক তদন্ত শেষে সিবিআই চণ্ডীগড়ের সেক্টর-২১ এলাকায় ফাঁদ পাতে। সেখানে কৃষ্ণাকে ৮ লাখ রুপি ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে ফোনকলে ভাল্লার তাঁকে অফিসে আসতে বলেন। সেই সূত্রে সিবিআই দল মোহালিতে গিয়ে ডিআইজিকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর সিবিআই ভাল্লারের রোপার, মোহালি ও চণ্ডীগড়ে অবস্থিত বাসভবনে তল্লাশি চালায়। উদ্ধার করা হয় প্রায় ৫ কোটি রুপি নগদ অর্থ, ১ দশমিক ৫ কেজি স্বর্ণ ও অলংকার, একাধিক সম্পত্তির দলিল, মার্সিডিজ ও অডি গাড়ির চাবি, ২২টি বিলাসবহুল ঘড়ি, লকারের চাবি ও ৪০ লিটার বিদেশি মদ। এছাড়া পাওয়া যায় ডাবল ব্যারেল বন্দুক, পিস্তল, রিভলবার ও এয়ারগান। কৃষ্ণার বাড়ি থেকেও উদ্ধার হয় আরও ২১ লাখ রুপি।
সিবিআই জানিয়েছে, দুজনকেই শুক্রবার আদালতে তোলা হবে। তদন্তকারীরা এখন সম্পদের উৎস ও সম্ভাব্য মানি লন্ডারিংয়ের যোগসূত্র খতিয়ে দেখছেন।
২০০৯ ব্যাচের আইপিএস কর্মকর্তা হরচরণ সিং ভাল্লার এর আগে পাটিয়ালা রেঞ্জের ডিআইজি, ভিজিল্যান্স ব্যুরোর জয়েন্ট ডিরেক্টর এবং একাধিক জেলায় এসএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২১ সালে তিনি নেতৃত্ব দেন একটি বিশেষ তদন্তকারী দলকে (এসআইটি), যারা শিরোমণি আকালি দলের নেতা বিক্রম সিং মজিঠিয়ার বিরুদ্ধে মাদক পাচার মামলার তদন্ত করেছিল। তিনি রাজ্য সরকারের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ অভিযানেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনি রোপার রেঞ্জের ডিআইজি পদে যোগ দেন। দায়িত্বে ছিলেন মোহালি, রূপনগর ও ফতেহগড় সাহিব জেলার। হরচরণ সিং ভাল্লার পাঞ্জাবের সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিজিপি) এম এস ভাল্লারের ছেলে।

