জাহিদ মালেকের পরিবারের শাসনামলে মানিকগঞ্জে গড়ে উঠেছিল দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন জুড়ে তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন অর্থ, ব্যবসা ও সরকারি সম্পদ। জাহিদ মালেক নিজে ছিলেন একাধিক মেয়াদে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি ভয়ংকর সিন্ডিকেট।
পরিবারের সদস্যরা ছিল স্ত্রী শাবানা মালেক, দুই সন্তান, বোন, ফুপাতো ভাই ও মামাতো ভাই। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেছিল বাস, ট্রাক ও সিএনজি ব্যবসা, সরকারি টেন্ডার, স্কুলের পদ, বালুমহাল ইজারা ও জমি দখল।
শাবানা মালেক নিজে গড়ে তুলেছিলেন পরিবহন চাঁদাবাজির চক্র। প্রথমে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাবুল সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, পরে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামকে দায়িত্বে রাখা হয়। পরিবার ব্যবসার জন্য তৈরি করেছিলেন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন জাহিদ মালেকের বোন রুবিনা হামিদ। পরিচালক হিসেবে ছিলেন স্ত্রী শাবানা, ছেলে রাহাত ও বোনের স্বামী কাজী আখতার হামিদ।
আইডিআরএ’র ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০-১৯ পর্যন্ত কোম্পানির ১৮৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় ছিল, যা বিমা গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ থেকে দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি থেকে শেয়ার বিক্রির টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পারিবারিক সিন্ডিকেটের বাইরে গড়ে উঠেছিল দলীয় সিন্ডিকেট। এতে ছিলেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। তারা নিয়োগ, টেন্ডারবাণিজ্য, জমি দখল, বালুমহাল ইজারা, পরিবহন ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আয় করেছেন। দুই সিন্ডিকেটের সম্মিলিত সম্পদ আনুমানিক আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ খ ম সুলতানুল আজমের সম্পদ দ্রুত বেড়েছে। পরিবহন ও সরকারি টেন্ডার তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাঁর মাধ্যমে জেলা ও সাটুরিয়া অঞ্চলে চাঁদাবাজি, জমি দখল ও সরকারি প্রকল্পে লুটপাট চালানো হয়।
ফুপাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সভাপতি হিসেবে বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাতে কোটি কোটি টাকার আয় হয়েছিল। যুবলীগ নেতা আবুল বশর, আবদুর রাজ্জাক রাজ, আবু বকর খান, সেলিম মোল্লা ও আনোয়ার হুসেন খানও জড়িত ছিলেন সিন্ডিকেটে। তারা টেন্ডারবাণিজ্য, সরকারি চাকরি, জমি দখল ও মাদক কারবারের মাধ্যমে সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।
মামাতো ভাই ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খানের ছেলে মহিদ খান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহ ও বালু উত্তোলন থেকে বিপুল অর্থ আয় করেছেন। তিনি জনশ্রুতিতে পরিচিত সুনামহীন চক্রের অংশ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, জাহিদ মালেক ও তাঁর পরিবারের সিন্ডিকেট ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারী সম্পদ ও ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। দলীয় ও পারিবারিক এই চক্র মানিকগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা এই ধরনের সিন্ডিকেট গঠনে উৎসাহ দেয়। চক্রের কার্যক্রম বন্ধ না হলে স্থানীয় অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের অধিকার হুমকির মুখে থাকবে।

