কক্সবাজার জেলার সীমান্তপথ দিয়ে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ইউরিয়া সার উদ্বেগজনক হারে পাচার হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উখিয়ায় দুই ডিলারের গুদাম থেকে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে ৬০৭ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে। এসব সার মায়ানমারে পাচারের জন্য রাখা হয়েছিল। সরকারের বরাদ্দকৃত সারের এ ধরনের অবৈধ রফতানি স্থানীয় বাজারে তীব্র সংকট সৃষ্টি করছে।
কৃষকরা সারের উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, সার পাচারে সরকারের নিয়োজিত ডিলারদের বেশির ভাগই জড়িত। জেলার ১৬৮ জন সার ডিলারের মধ্যে ২৮ জন অবৈধ বা দ্বিগুণ নিয়োগপ্রাপ্ত। অধিকাংশ ডিলারের সঙ্গে সীমান্তবর্তী কিছু সদস্য—যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা শ্রমিকও রয়েছেন—সার পাচারে যুক্ত।
দ্বিগুণ লাভের লোভে ডিলাররা সরকারি ভর্তুকি দেওয়া সার পাচার করছেন। কক্সবাজারে কিছু ডিলার শুধু বরাদ্দকৃত সার পাচারই করছেন না, চট্টগ্রামের বাজার থেকে সার এনে সীমান্তবর্তী গুদামে মজুদ করে পরে পাচার করছেন।
কক্সবাজারে ১৬৮ জন ডিলার রয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ৮৪ জন করে ডিলার নিয়োগ করেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থানীয় ডিলারদের বিরুদ্ধে। একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিগুণ বরাদ্দ পাচ্ছেন এবং সারের অর্ধেক পাচার হচ্ছে মায়ানমারে।
সারের বাজার মূল্যের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৫০ কেজি প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার সরকারের নির্ধারিত মূল্য এক হাজার ৩৫০ টাকা। রাখাইনে এর দাম কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বস্তা সার পাচারে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হয়।
গত ৯ অক্টোবর রাতে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ ও কৃষি কর্মকর্তাদের যৌথ অভিযানে ২১৭ বস্তা সার জব্দ করা হয়। অভিযানের আগে আরও ৭৩ বস্তা সার পাচার করা হয়েছে। অভিযানের সময় ডিলার আহমেদ কবির পালিয়ে যান।
এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কোট বাজার ভালুকিয়া সড়কে ডিলার জাহেদুল আলমের গুদাম থেকে ৩৯০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়েছিল। উখিয়া থানার ওসি মো. জিয়াউল হক জানিয়েছেন, দুই ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামাণিক জানিয়েছেন, জেলায় ১৬৮ জন ডিলারের মধ্যে ২৮ জন ডাবল নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদের ডিলারশিপ বাতিলের আবেদন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা সীমান্তবর্তী ছয়টি পথ দিয়ে পাচারের ঘটনা দমন করতে অভিযান চালাচ্ছেন।
সারের পাচারের কারণে স্থানীয় বাজারে সংকট ও দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। কৃষকরা সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যেও সার পাচ্ছেন না। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সীমান্ত দিয়ে সার পাচারের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কৃষি কর্মকর্তা কামানাশীষ সরকার বলেন, দ্রুত কৃষকবান্ধব সার বিপণণব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট ডিলার সাহেদুল হক সার পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে অল্প পরিমাণে সার পাই। এত স্বল্প পরিমাণের সার পাচার করা সম্ভব নয়। তবে সীমান্ত এলাকার কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসি শিগগিরই কৃষকবান্ধব সারের বিপণণব্যবস্থা ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

