ঝিনাইদহ পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পে ২০ কোটি টাকার টেন্ডারে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ঠিকাদার এসএম শহিদুল ইসলাম গত ৫ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি এলজিইডির আরইউটিডিপি প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের জন্য ২০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে ১৯টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। বর্তমানে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম ব্যবহার করা হলেও, অভিযোগ অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন কারসাজি করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।
সড়ক নির্মাণের খরচ প্রকৃত মূল্য থেকে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দেখানো হয়েছে। তিনটি সড়কে সম্ভাব্য ৫ কোটি টাকার স্যালভেজ রয়েছে। ২৫৩৭ মিটার ড্রেন এবং ৪৬০৮ মিটার রাস্তা মিলিয়ে মোট ৭১৪৫ মিটার কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। মূল কাজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। স্যালভেজের টাকা যোগ করলে বাজেট দাঁড়ায় ২৪–২৫ কোটি টাকার মধ্যে। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, প্রিন্সিপাল করিমুদ্দিন সড়কে একই কৌশলে কোটি কোটি টাকা গায়েব করা হয়েছে। ২৭টি খুঁটি সরানোর নামে ভুয়া বিল ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকার মতো। ১২৭০ মিটার পুরোনো রাস্তা সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যেখানে লাখ লাখ টাকার স্যালভেজ গায়েব করা হয়েছে।
করিমুদ্দিন সড়কের পাশ দিয়ে ১২৭০ মিটার ড্রেন তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি। অথচ রাস্তার পাশে পুরনো একটি ড্রেন রয়েছে, যা সংস্কারের যোগ্য। সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে নবগঙ্গা নদী পর্যন্ত ১৩০০ মিটার ড্রেন দেখানো হলেও, সেখানে ইতিমধ্যে দুটি পুরনো ড্রেন আছে। কিছু অংশে মাত্র সংস্কার প্রয়োজন। তবুও নির্মাণ খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
নতুন হাটখোলা সড়কে আরসিসি রাস্তার কাজও টেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বালু, সাববেজ ও ম্যাকাডম করে আরসিসি ঢালাই করতে হবে। বাস্তবে সেখানে ইতিমধ্যে ২৪ ইঞ্চি রাস্তা নির্মিত আছে। স্যালভেজের টাকা বাদ না দিয়ে ৯৫১ মিটার রাস্তার খরচ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের প্রয়োজন নেই। তবুও ২৫টি ভুয়া খুঁটির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ লাখ টাকা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি পৌরসভায় চাকরি করছেন। জানুয়ারিতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের আদেশে পাবনার সাঁথিয়া পৌরসভায় বদলি করা হয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে একই জায়গায় চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
কামাল উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “নিয়মমাফিক সবকিছু হয়েছে। একাই দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। কিছু ঠিকাদার অতিরিক্ত সুবিধা না পেয়ে অভিযোগ করেছেন।”
পৌরসভার প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রথীন্দ্রনাথ রায় জানিয়েছেন, বিষয়টি পিডি অফিসের দায়িত্বে। তারা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

