প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক বড় স্তম্ভ। এই রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তাই বলা যায়—বহু শ্রমিকের গন্তব্যই আরব দেশগুলো। কিন্তু সেই পথে চলে আসছে একটি মারাত্মক প্রতারণা: তথাকথিত “ফ্রি ভিসা”।
আইএলও কনভেনশনের দৃষ্টিতে ফ্রি ভিসা নেই। বাস্তবে এটি একটি প্রতারণামূলক চুক্তি। এ পথে শ্রমীকে কেবল বিদেশে প্রবেশের অনুমতি বা স্পনসরশিপে বিক্রি করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো চাকরির নিশ্চয়তা থাকে না। ফলে মানুষ বিদেশে গিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়ছেন।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম—ওকাপ—যে গবেষণা করেছে, তা উদ্বেগজনক। সেখানে বলা আছে, সরকার নির্ধারিত খরচের তুলনায় অনেকেই প্রায় পাঁচ গুণ বেশি খরচ করছেন। তবু বহু শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না। এটা নির্দেশ করে যে বিদেশে মানবসম্পদ প্রেরণের ব্যবস্থাটি অনিয়ম ও দালালচক্রের কবলে পড়েছে।
ওকাপের জরিপ দেখায়, ফ্রি ভিসা নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য ৭২ শতাংশ কর্মী ঋণ নিয়েছেন। ১১ শতাংশ তাদের জমি বন্ধক রেখেছেন। এবং ৬ শতাংশ পরিবারিক সম্পদ বিক্রি করেছেন। এত ত্যাগের পরেও গন্তব্যে এসে ৪৩ শতাংশ কর্মী কোনো কাজ পাননি।
এ অবৈধতার পেছনে রয়েছে শক্তিশালী দালাল নেটওয়ার্ক ও অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি। এসব এজেন্সি আইনী কাগজে বৈধতা পেয়ে থাকলেও মাত্র ৭ শতাংশ কর্মী সরাসরি তাদের মাধ্যমে গেছেন। বাকি পথে দালালদের হাতেই পুরো প্রক্রিয়া চলে। এতে দালালদের প্রভাব ও দখল স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সমাধান একরকম নয়; তবু জরুরি ব্যবস্থা প্রয়োজন। দালাল ও অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। সরকার নির্ধারিত অভিবাসন খরচ বাস্তবে কার্যকর করা এবং তা কঠোরভাবে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক শাস্তি থাকা দরকার।
শুধু কর্মী পাঠানোই শেষ কথা নয়। দক্ষ কর্মী তৈরির প্রশিক্ষণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দক্ষতা বাড়লে শ্রমিকরা ভালো বেতন পাবেন। প্রতারণির শিকার হওয়ার ঝুঁকি কমবে। তৃণমূল পর্যায়ে “ফ্রি ভিসা ফাঁদ” সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরিও জরুরি।
অবশেষে বলতে হয়—ফ্রি ভিসা নাকি “ফ্রি”—এটি মিথ্যা। এটি বড় ফাঁদ। যদি সরকার আন্তরিকভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে, তবেই দেশের লাখো শ্রমিক অনিশ্চিত জীবন থেকে মুক্তি পাবে।

