চান্দিনা পৌর ভূমি অফিসের এক পিয়ন শরীফুল ইসলাম অনিয়ম-দুর্নীতি করে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে স্থানীয় ও অফিসিয়াল সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্রগুলো বলছে, তিনি সময়ের সঙ্গে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ভূমি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে বেশ কয়েক ধরনের অবৈধ নিয়ম চালু রাখেন।
অভিযোগের চিত্রটি বিস্তৃত। খাস জমি দখল বুঝিয়ে দেয়া, খারিজ থেকে উৎকোচ আদায়, জাল নথি তৈরি, ভুয়া দাখিলা কেটে টাকা নেয়া, বাজারের খাস দখলদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, পেরিফেরি দোকানভিটী খাজনা আদায়ের নামে লাখ লাখ টাকা নেয়া — এসবের উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয়দের কথায় তিনি একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন যা এলাকায় ভূমি সংক্রান্ত প্রতিটি লেনদেনকে প্রভাবিত করেছে।
সম্পত্তির গতিবিধি ও অবস্থান স্থানীয়রা ও সূত্র জানায়, শরীফুল চান্দিনা সদরে চারতলা একটি বাড়ি করেছেন। তিনি শেখা হিসেবে শত কোটি টাকার নয়, তবে বিভিন্ন প্লট ও কৃষিজমি কিনে অন্তত ২০ কোটি টাকার দৃশ্যমান সম্পদ গড়ে তুলেছেন—পৌরসভার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় প্লট ও বাড়ি, ওয়াপদা সড়কের পাশে প্লট, সরকারি হাসপাতালের পাশে জমি ও নিজের গ্রামের ১০ বিঘারও বেশি কৃষিজমি রয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায় তার নামে ও নামে-বেনামে ব্যাংক ব্যালান্সও রয়েছে।
পটভূমি ও রাজনৈতিক সংযোগ সূত্র বলেন, শরীফুল ২০১৭ সালে চান্দিনা পৌর ভূমি অফিসে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সবাইয়ের সাথে আত্মীয়তাবশত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ফেসবুকে সংসদ-সদস্যদের পক্ষে প্রচারণাও করতেন বলে জানা গেছে। বারবারের এই সম্পর্কই তাকে ভূমি সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ দানে সুবিধা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিন্ডিকেটের কাজকর্ম স্থানীয়রা বলছেন, চান্দিনা বাজারে সরকারি খাস জায়গা খুঁজে বের করে দলবল দিয়ে দখল বুঝিয়ে দিতেন শরীফুল। খাজনা নবায়ন বা লিজ সংক্রান্ত কাজে প্রতিটি দোকান থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়া হতো। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বাজারের কিছু দোকানভিটির জন্য তিনি লাখ লাখ টাকা হাতে নিয়েছেন। কাহিনীগুলি অনুসারে, সাবরেজিস্ট্রির অফিসের দলিল লেখকদের সহায়তায় ত্রুটিপূর্ণ খারিজ ও ভুয়া দাখিলা তৈরি করা হতো। ছায়কোটের কয়েকজনকে ব্যবহার করে দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ছিল বলেও বলা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী আলী আকবর বলেন, বাজারের একটি খাস জমির জন্য তিনি ৪০ লাখ টাকা দিয়েছেন। আরেক ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বললেন, ব্র্যাক ব্যাংকের সামনের খাস জায়গার অংশ দখলের সময় শরীফ ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, সরকারি খাল ভরাট করে জায়গা জোরপূর্বক দখলে সহযোগিতা করেছেন বলে একটি বিস্তৃত অভিযোগ রয়েছে, যেখানে সাবেক মেয়রের নামও আসছে।
দলিল লেখক ও স্থানীয় সূত্রের বর্ণনা এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলিল লেখক বলেন, শরীফুল ত্রুটিপূর্ণ দলিল তৈরিতে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি খারিজ ও খাজনার দাখিলা সম্পাদন করা থেকে শুরু করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে চড়া রকমের টাকা আদায় করতেন। সাবরেজিস্ট্রারের অফিসের কাছে বাড়ি করে তিনি সেখানে বসেই ওই কাজগুলো চালাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শরীফুলের প্রতিক্রিয়া অভিযোগ জানতে চাওয়ায় শরীফুল ইসলাম সাংবাদিককে ব্যক্তিগতভাবে বলেন, “কাজের ক্ষেত্রে আমার ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। কিছু অনিয়ম তো হইছে। এমন অনেকেই করে। আপনি (প্রতিবেদক) আমার বাবা। আমার গার্ডিয়ান। আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে ক্ষতি কইরেন না। আমি আপনার পায়ে পড়ি।” তার কথায় কোনো সুনির্দিষ্ট অস্বীকার বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের আশ্বাস চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর জানান, পিয়ন শরীফুলের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ এসেছে। মানুষ নানা ধরনের হয়রানির কথা বলেছেন। তার অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়েও যথেষ্ট কথাবার্তা আছে। তিনি বলেন এসব অভিযোগ তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখন পরের ধাপ? স্থানীয়দের দাবি ও অফিসিয়াল তথ্য মিলিয়ে এখন তদন্ত ছাড়া উপায় নেই। অভিযোগগুলির প্রামাণ্য মিললেই দায়ী কাউকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে। ভূমি অফিসে স্বচ্ছতা পুনরুদ্ধার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে দ্রুত কাগজি ও মাঠ পর্যায়ের তদন্ত দরকার। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বতন্ত্র তদন্ত এই কাহিনীর ন্যায্য নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে পারে।

