কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের ৯৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, গত (বৃহস্পতিবার) ভোররাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হোসেন ইমামের বাসভবনে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। চাকরিপ্রার্থীরা রাতভর সেখানে অবস্থান করে উত্তর মুখস্থ করেন।
ওই বাসা থেকে পরীক্ষার্থীরা বের হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তুলেছে। সচেতন মহল দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. হোসেন ইমাম জানান, ঘটনাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মো. আরেফিন বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কুষ্টিয়া দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বিষয়টি অবগত এবং তদন্ত শুরু করেছেন।
নিয়োগ পরীক্ষা প্রসঙ্গে জানা গেছে, গতকাল (শুক্রবার) সকাল ১০টায় কুষ্টিয়ায় ৯৭ জন স্বাস্থ্য সহকারীর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এর আগে ভোররাতে কিছু পরীক্ষার্থীকে কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আরএমওর বাসা থেকে বের হতে দেখা গেছে। এ সময় সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা দ্রুত পালিয়ে যান।
কুষ্টিয়া শহরের তালিপাড়ায় আরএমও হোসেন ইমামের পৈতৃক পাঁচতলা বাড়ির কাছেই ‘নিউ সান’ নামের একটি ক্লিনিক রয়েছে। অভিযোগ আছে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হোসেন ইমামই এটির মূল মালিক। ফজরের আগে ভোর ৪টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পরীক্ষার্থীদের ওই ক্লিনিকে আনা হয়। পরে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে পরীক্ষার্থীদের ক্লিনিকের পেছন দিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অন্তত ৪০ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। পরীক্ষার দিন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে আরএমওর বাসা থেকে ফাইল হাতে বেশ কয়েকজন যুবক বের হতে দেখা গেছে। সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তারা পালিয়ে যান। এরপর সকাল ১০টায় শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রের পরীক্ষায় তারা অংশ নেন।
অভিযোগ আছে, পরীক্ষার্থীদের বাসায় জড়ো করে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয় এবং তারা উত্তর মুখস্থ করেন। এ জন্য মোটা অঙ্কের অর্থও নেওয়া হয়। এক পরীক্ষার্থীর স্বজন জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ১৩ থেকে ১৬ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছে। আরএমওর বড় ভাই হাসান ইমাম নান্নু কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিউজ না করতে অনুরোধ করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. হোসেন ইমাম বলেন, তার বাসায় বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাদের বের হওয়ার ভিডিও ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি ওই নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং অভিযোগ মিথ্যা।
পরীক্ষার্থীদের আত্মীয়রা জানান, ডা. হোসেন ইমামের ভাই নান্নুর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয়। পরে কয়েকটি কক্ষে বসিয়ে তারা উত্তর মুখস্থ করেন। মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। পরীক্ষা বর্জন করা একজন প্রার্থী আব্দুস সালাম বলেন, সীমাহীন নিয়োগ-বাণিজ্য ও দুর্নীতির কারণে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেননি। তিনি দেখেছেন, রাতভর বাসায় থাকানো পরীক্ষার্থীরা পরে পরীক্ষার হলে যাচ্ছে। এটি স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে প্রশ্নপত্র বিতরণ হয়েছে। এক পরীক্ষার্থীর স্বামী মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ভিডিওতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা ভোররাতে অ্যাম্বুলেন্সে বাসায় ঢুকছে ও বের হচ্ছে। তিনি জানান, এই চাকরির জন্য ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার লেনদেন চলছে।
খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও নিয়োগ পরীক্ষার কমিটির সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান জানান, নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণে কোনো দুর্বলতা ছিল না। কেউ বাইরে থেকে সুবিধা নিতে চাইলে তার দায়ভার নিজেকেই নিতে হবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মো. আরেফিন জানান, আরএমওর বাসা থেকে যুবকরা ফাইল হাতে বের হওয়ার ভিডিও দেখেছেন। তারা কি সিভিল সার্জন অফিসের পরীক্ষার্থী, তা এখনই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

